অবসাদ বা বিষণ্নতা রোগ আপনাকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিতে ভোগাবে। আপনার মনে হবে আপনি একা- শুধু আপনি একাই- আপনার নিজের মনের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আর আপনার এই মানসিক অসুস্থতা আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষদেরও ক্ষতি করে। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ান সে ক্ষেত্রে এটা আরো সত্যি হয়ে দেখা দেয়। বিপিএস রিসার্চ ডাইজেস্ট নামের একদল মনোবিজ্ঞনীর নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অবসাদ বা বিষণ্নতা জনিত মানসিক অসুস্থতা দাম্পত্য জীবনের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। ১৩৫ জোড়া দম্পতির উপর গবেষণা চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এর আগের গবেষণাগুলো প্রধানত ব্যক্তিদের উপর চালানো হয়েছিল। কিন্তু এবারের গবেষণায় উরবানা-চ্যাম্পেইন এর ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েস এর তিন গবেষক দম্পতিদের নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তারা এমন ১৩৫ জোড়া দম্পতির উপর গবেষণা চালান, যাদের একজন বা দুজনই অতীতে অবসাদে ভুগছিলেন। এই দম্পতিগুলোর সদস্যদের বয়স ২০ থেকে শুরু করে ৮৩ বছরের মধ্যে। এদের কোনো কোনো দম্পতি মাত্র ছয় মাস একসঙ্গে ছিলেন আবার কোনো কোনো দম্পতি সর্বোচ্চ ৪৬ বছর একসঙ্গে ছিলেন। এই গবেষণা ছিল সম্পূর্ণতই গুণগত একটি গবেষণা। অর্থাৎ, এতে কোনো পাগলাটে ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর দরকার হয়নি। গবেষকরা শুধু এই দম্পতিদের একসঙ্গে জীবন-যাপনের অভিজ্ঞতা রেকর্ড করেছেন। প্রতিটি দম্পতিকেই এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল- তাদের কারো ব্যক্তিগত দুঃখের অনুভুতি বা মানসিক অবসাদগ্রস্ততা ও বিষণ্নতার অনুভুতি কি তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি করেছে? এই প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দেওয়াটা অতটা সহজ কাজ নয়। বেশিরভাগ দম্পতিই অবসাদ বা বিষণ্ণতার ভূতের আছর কী করে তাদেরকে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল সে বিষয়ে কথা বলেছেন। অনেক দম্পতিই তাদের একজনের অবসাদগ্রস্ততা ও বিষণ্নতার অনুভুতি কী করে অপরজনের মধ্যেও অবসাদগ্রস্ততা ও বিষণ্নতার অনুভুতি উস্কে দিয়েছিল সে ব্যাপারে লিখেছেন। কোনো কোনো দম্পতি নিজেদের মাঝে বোঝা-পড়া ও যৌন জীবন নিয়ে সংগ্রামের কথাও লিখেছেন। অনেক দম্পতি আবার এ ব্যাপারে খুবই আশাব্যঞ্জক উত্তর দিয়েছেন। তাদের মানসিক অবসাদগ্রস্ততা বা বিষণ্নতা কী করে অসম্ভাব্য সব উপায়ে তাদেরকে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জড়াতে সহায়তা করছে সেসব বিষয়ে লিখেছেন। এমন এক স্বামী, যার স্ত্রী বড় ধরনের অবসাদে আক্রান্ত ছিলেন, তিনি লিখেছেন: আমি আমার স্ত্রীকে তার মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সহায়তা করতে পেরে প্রায়ই তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সহমর্মিতার অনুভুতি উপলব্ধি করতাম। যা আমার নিজেকেও মানসিক প্রশান্তি ও সন্তুষ্টিমূলক অনুভুতিতে ভরিয়ে দিত। নিজে বড় ধরনের অবসাদে আক্রান্ত এক স্ত্রী তার অবসাদ ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত স্বামী সম্পর্কে লিখেছেন: আমার স্বামীকে আমি খুব ভালো মতোই বুঝি। কারণ আমরা দুজনেই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত। এতে একসঙ্গে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বরং সুবিধাই হয়। কারণ আমরা দুজনেই বিষয়টা ঠিকঠাকমতো বুঝি। যার স্ত্রী ছিলেন পুরোপুরি সুস্থ, ক্রমাগত অবসাদ বা বিষণ্নতা জনিত মানসিক বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত ২৭ বছর বয়সী এমন এক স্বামী লিখেছেন: বিষণ্নতার অনুভুতি সাধারণত আমাদেরকে এর কারণ সম্পর্কে পরস্পরের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার দিকে নিয়ে যেত। এতে হয়তো আমাদের রোমান্টিক সম্পর্কের সময়ের কিছুটা ঘাটতি হতো। কিন্তু বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার যৌথ প্রচেষ্টা আমাদেরকে প্রায়ই আরো গভীর প্রেম-ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতো। যার ফলে আমাদের রোমান্টিক সম্পর্ক বরং আরো শক্তিশালি হতো। নিজে বড় ধরনের অবসাদে আক্রান্ত আরেক স্ত্রী যার স্বামী বাইপোলার ডিজঅর্ডার জনিত অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত ছিলেন, তিনি লিখেছেন: আমার অবসাদগ্রস্ততার সময়টুকুতে আমি বরং আমার পার্টনারের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্তি ও ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতাম, স্বাভাবিক সময়ে যা কখোনোই অনুভুত হতো না। কারণ, আমার স্বামী যখন মানসিক অবসাদ বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয় তখন সে আসলে কী যন্ত্রণায় ভুগছে তা আমি খুব ভালো মতোই বুঝি। এতে তার প্রতি আমার সহানুভুতি আরো বেড়ে যায়।
Read More News