সৌভাগ্য নিয়ে উড়ে আসা সিমন্স

অদ্ভুত সব ঘটনাগুলো কেন যেন লেন্ডল সিমন্সের সঙ্গেই বারবার ঘটে! বছর দুই আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের খেলা খেলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছিলেন। কেন যেন বিমানবন্দরে মার্কিন শুল্ক কর্মকর্তার সন্দেহ হলো, ব্যাটের ভেতর লুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাদক! সন্দেহের চোটে ব্যাটটা ড্রিল মেশিন দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেললেন। তাঁর সন্দেহ তো টিকলই না, সিমন্সের ব্যাটটা গেল! গত বছর আইপিএলের কথা। অ্যারন ফিঞ্চ ওপেন করবেন পার্থিব প্যাটেলের সঙ্গে—মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কর্তাব্যক্তিরা এমনটাই ঠিক করেছেন। এমন সময় ফিঞ্চের চোট, দায়িত্ব পেলেন সিমন্স। সেবার পার্থিবের সঙ্গে তাঁর জুটিটা দারুণ জমে গেল, গড়ে তাঁরা ম্যাচপ্রতি ৫০ রানের জুটি গড়লেন, যেটা বড় ভূমিকা রাখে মুম্বাই ইনডিয়ানসের আইপিএল শিরোপা জেতায়। এখানেই শেষ নয়, মার্চের ৫ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ড জানায় পিঠের চোটের কারণে সিমন্সের পক্ষে বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে খেলা সম্ভব নয়। তাঁর বদলে এলেন এভিন লুইস। কি আশ্চর্য, আরেকজনের চোটের কারণে সিমন্সকে আসতেই হলো ভারতে! আন্দ্রে ফ্লেচারের চোট তাঁকে ধরাল বাড়ির পথ আর শুক্রবার আইপিএল খেলতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো থেকে ভারতে আসার অপেক্ষায় থাকা সিমন্সকে এগিয়ে আনতে হলো ফ্লাইট। বাকিটুকু তো ইতিহাস!
Read More News

মুম্বাই ইনডিয়ানসের এক ঘরের ছেলেই তো টিম ইন্ডিয়াকে ঘরের মাঠে দর্শক বানিয়ে দিল বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ফাইনালে। যে ফরম্যাটের ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরের আয়োজক ভারত, গত সাতটি বছর ধরে সেই ফরম্যাটেই কিনা দেশের মাঠে ভারতীয় দল নেই ফাইনালে! নিয়তির এই পরিহাসের নেপথ্য নায়ক সেই সিমন্স, যাঁর সঙ্গে অদ্ভুত সব ঘটনার কাকতালীয় সব যোগ! স্কোরকার্ড বলছে, ৫১ বলে ৮২ রানের ‘একটি’ অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন সিমন্স। দর্শকরা জানেন, সিমন্স আসলে খেলেছেন ‘চারটি’ ইনিংস! দুইবার নো বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচেছেন, একবার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আরেকবার হার্দিক পাণ্ডের বলে। এখানেই শেষ নয়, রবীন্দ্র জাদেজা তাঁর ক্যাচ ধরেও সীমানাদড়ির গায়ে পরানো বিজ্ঞাপনী মোড়কে পা লাগিয়ে দেওয়ায় সম্পূর্ণ বিপরীত ভাগ্য হয়েছে সিমন্সের, অর্থাৎ বিদায়ের বদলে ১ বলে সর্বোচ্চ রানপ্রাপ্তি! ভাগ্যে এমন সওয়ারি বিশ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কেউ হয়েছেন কি না, সে গবেষণা থাক।

তার চেয়ে বরং জেনে নেওয়া যাক জীবনের সেরা ইনিংস খেলার ৪৮ ঘণ্টা আগে  সিমন্সের  হাল কী ছিল। ত্রিনিদাদে নিজের বাড়িতে সোফায় আধশোয়া হয়ে টিভি দেখছিলেন, এমন সময় পেলেন ক্লাইভ লয়েডের ফোন। প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক এবং বর্তমানে প্রধান নির্বাচক কথাবার্তায় ছিলেন সংক্ষিপ্ত এবং নিখুঁত ইয়র্কারের মতোই ‘ডেড স্ট্রেইট’, ‘তুমি ঠিক আছো? আন্দ্রে ফ্লেচারের বদলি হিসেবে তুমি কি বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে খেলতে আসতে পারবে?’  লয়েডকে না বলার সাহস কী করে হয়, তাই দুটি ফ্লাইট বদলে মহাদেশ-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার সিমন্স পৌঁছে যান মুম্বাইতে, আরব সাগরের তীরের যে শহরটা তাঁর খুব চেনা। গেইলের সেঞ্চুরির রহস্য যদি স্নেহা উল্লালের সঙ্গে রাতভর পার্টি হয়, সিমন্সেরটা তার ঠিক উলটো; ঘুম। ‘আমি ম্যাচটার আগে খুব বিশ্রাম নিয়েছি। দুটি ফ্লাইটে ঘুমিয়েছি, এসে রাতটা ঘুমিয়ে তারপর সকালে অনুশীলন শেষে আবার ঘুম।

একেবারে ৩টা থেকে ১০টা পর্যন্ত, এরপর আবার ১২টা থেকে ৪টা। বলা যায় ভালোই বিশ্রাম নিয়েছি আমি।’ যে আইপিএলে খেলে হাত পাকিয়েছেন কোহলি-ধোনিরা, সেই আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাদেরই হারিয়ে দিলেন ভিনদেশি সিমন্স, ‘আমি তো আসতামই, আইপিএলের জন্য শুক্রবারে রওনা হওয়ার কথা ছিল। এটা আমার আইপিএলের হোমগ্রাউন্ড, কন্ডিশনটাও ভালো জানি, তাই চট করে মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম।’ ওয়াংখেড়ে তো রোহিত শর্মা, হার্দিক পাণ্ডের হোমগ্রাউন্ড। মার্চের শেষরাতে ভাগ্যদেবী এই দুই ঘরের ছেলেকে বাদ দিয়ে ভিনদেশি সিমন্সকেই কেন বেছে নিলেন, সেটাও বোধ হয় তাঁর জীবনের অনেক অমীমাংসিত রহস্যের একটা হয়েই থাকবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *