মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৫ সালের প্রথমার্ধের একটি বিশদ জরিপের ভিত্তিতে যে ৫২ পাতার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তা-তে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের ভেন্যু কাতারে বিদেশি শ্রমিকদের দুরবস্থার ছবি ফুটে উঠেছে৷
সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের ১৩২ জন কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, সেই সঙ্গে কাছের অ্যাস্পায়ার জোন নামধারী বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজ করছে, এমন ৯৯ জন বিদেশি শ্রমিকের; এছাড়া অন্যত্র বাগানের কাজ করছে, এমন তিনজন বিদেশি শ্রমিকের৷
যে সব শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই এসেছেন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল থেকে৷ সকলেই নানা ধরনের অপব্যবহারের কথা বলেন: যেমন অপর্যাপ্ত বাসস্থান, মাসের পর মাস মাইনে না পাওয়া, কিংবা পাসপোর্ট আটকে রাখা৷
Read More News
বহিরাগত শ্রমিকরা জানান যে, তাদের ৫০০ থেকে ৪,৩০০ ডলার রিক্রুটমেন্ট ফি দিতে হয়েছে, অনেক সময় ধার করে – যদিও চাকরি দেবার জন্য কমিশন নেওয়া কাতারে আইনবিরুদ্ধ৷ অধিকাংশই কাতারে পা দেবার পর আবিষ্কার করেন যে, রিক্রুটাররা দেশ থাকতে যে মাইনের কথা বলেছিল, এখানকার মাইনে তার অনেক কম – বহুক্ষেত্রে মাসে ২০০ ডলারের বেশি নয়, সেই সঙ্গে খাবারদাবারের জন্য – মাসে – আরো ৫০ ডলার৷ যাদের জরিপ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২২৮ জন নাকি প্রতিশ্রুত পরিমাণের চেয়ে কম মাইনে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন৷
পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশি শ্রমিক সত্তরের দশকে নির্মিত খলিফা স্টেডিয়ামকে বিশ্বকাপের উপযুক্ত করে তুলছে৷ আগামী দু’বছরে এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে ৩৬,০০০, অর্থাৎ সাতগুণ হবে৷ ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফলে কাতারে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের একটি নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে৷
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কাতারের তথাকথিত ‘‘কাফালা” স্পন্সরশিপ প্রণালী, যার ফলে বিদেশি শ্রমিকদের চাকরি বদলানো কিংবা কাতার ছেড়ে যাবার জন্য নিয়োগকারী সংস্থার অনুমতি লাগে৷ সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপর একটি জটিলতা: কনস্ট্রাকশন শিল্পে বড় বড় কনট্র্যাক্টগুলো পায় বড় বড় বহুজাতিক সংস্থা – কিন্তু তার পরেই শুরু হয়ে যায় সাবকন্ট্র্যাক্টর ও আরো ছোট কন্ট্র্যাক্টরদের রাজত্ব, যারা বস্তুত লেবার সাপ্লাই করে৷ বিশেষ করে একটি লেবার সাপ্লাই কোম্পানির নাম শোনা গেছে – সেভেন হিলস – যারা নাকি মাসের পর মাস কর্মীদের মাইনা বকেয়া রেখেছে৷
পাসপোর্ট আটক রাখার কথা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছেন ৮৮ জন বহিরাগত শ্রমিক, এদের মধ্যে নেপালি শ্রমিকরাও ছিলেন৷ এমনকি নেপালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরেও নাকি কিছু নেপালি শ্রমিককে কাতার ছেড়ে বাড়ি যাবার অনুমতি দেয়া হয়নি৷