বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বিজিবির গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে সংস্থাটি বলছে, পরিস্থিতির কারণে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশেই তারা গুলি করেছে।
ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তেরশো ব্যক্তিতে আসামী করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। গুলির ঘটনা খতিয়ে দেখতে একাধিক তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দিনে সারাদেশ সহিংসতায় মারা গেছে ১১জন।
কিন্তু একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো একটি ছোট আকারের নির্বাচনে কি এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যাতে, এত মানুষের প্রাণহানি হলো?
মঙ্গলবার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ধানিসাফার ইউনিয়নের নির্বাচনের একটি কেন্দ্র, সাফা ডিগ্রি কলেজ মাঠে বিজিবি ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়, হাসপাতালে নেবার পথে মারা যান আরো দুইজন।
Read More News
বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলছেন, ”সেখানে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশেই তার বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করেই দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালানোর নির্দেশ দিলে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা গুলি করে।”
সেই কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী জিয়াউল বাসেত।
তিনি বলছেন, ”কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে আটকে রাখা হয়েছে, এমন বার্তা পেয়েই তারা কেন্দ্রে যান। সেখানে তাদের উপরেও হামলা হলে, বাধ্য হয়েই তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তখন আর কোন বিকল্প ছিল না।”
মঠবাড়িয়ার সাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়, যখন কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পাওয়া ৭৪৬টি ভোট বাতিল করে দেন, কারণ এসব ভোটে কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল না।
কিন্তু এই ভোটগুলোই বহাল রাখার দাবিতে ওই প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রটি ঘেরাও করে কর্মকর্তাদের বের হতে বাধা দেন।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বেলাল তালুকদার বলছেন, তাদের দাবি ছিল, কেন্দ্র থেকেই যেন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেটা না করে কর্মকর্তারা চলে যাবার চেষ্টা করলে তারা বাধা দেন। তাদের প্রার্থীর সমর্থনে তারা শুধু কেন্দ্রটি ঘিরে রেখেছিলেন, কিন্তু কারো উপর হামলা করেননি।
তবে পিরোজপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বারবার অনুরোধ করার পরেও সেখানকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতাকর্মীরা কেন্দ্রটি ছাড়েননি। এমনকি পুলিশ লাঠিচার্জ আর ফাকা গুলি করার পরেও তারা অবস্থান নিয়ে ছিলেন। এরকই একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট গুলির নির্দেশ দেন।
এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়িতে করে কেন্দ্রটি ছেড়ে চলে যায়।
গুলির ঘটনার আগে ও পরে কেন্দ্রটিতে গিয়েছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক এ কে এম ফয়সাল। তিনি বলছেন, স্বাক্ষর ছাড়া ভোটগুলো বাতিল হলেও, কিভাবে স্বাক্ষরবিহীন ভোট বাক্সে গেল, সেই উত্তর অবশ্য কারো কাছে নেই।
তিনি বলছেন, ”সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রটির আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। কিন্তু শুরুতেই যদি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের বুঝিয়ে নিবৃত্ত করা হতো, তাহলে হয়তো শেষপর্যন্ত ঘটনাটি এতদূর গড়াতো না।”
ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তেরশো ব্যক্তিকে আসামী করে একটি মামলা করেছে পুলিশ, যদিও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখতে প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির পক্ষ থেকে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।