বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারির পটভূমিতে ‘করোনা’ পরীক্ষা আবশ্যিক হয়ে উঠতে পারে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা চলছে।
জানা গেছে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আসা ও যাওয়া যাত্রীদের কভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে, খরচ হবে ১৯০ ইউরো। এই পরীক্ষার বড় সুবিধা হলো ফলাফল ‘নেগেটিভ’ হলে ওই যাত্রীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না, নয়তো ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে।
গত ১৫ এপ্রিল এমিরেটস এয়ারলাইনস দুবাই থেকে তিউনিসিয়াগামী যাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করে। যাত্রীরা করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন কি না এবং তাঁদের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়েছে কি না।
Read More News
বর্তমানে বিদেশ থেকে সাধারণ যাত্রীদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে ‘কভিড-১৯ নেগেটিভ’ বা ‘করোনার উপসর্গ নেই’ এমন মেডিক্যাল সনদ চাওয়া হচ্ছে। নয়তো বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ করোনা মহামারি মোকাবেলায় বিদ্যমান বেশির ভাগ ভিসা বাতিল করেছে। বাংলাদেশও আগমনী ভিসাসহ স্থগিত করা ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ‘কভিড-১৯ নেগেটিভ’ বা ‘করোনার উপসর্গ নেই’ এমন মেডিক্যাল সনদ চেয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ভিসা আবেদন ফরমে সংক্রামকসহ বিভিন্ন রোগের নাম উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হয় যে ভিসা আবেদনকারী ওই রোগগুলোর কোনোটিতে আক্রান্ত কি না। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে ওই তালিকায় কভিড-১৯ যুক্ত হবে।
করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বে ভ্রমণ ব্যবস্থায় দুটি বড় পরিবর্তনের আভাস রয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিশ্লেষণে। এর একটি হলো ‘টাচলেস ট্রাভেল’ এবং অন্যটি ‘ডিজিটাল হেলথ পাসপোর্ট’। ‘টাচলেস ট্রাভেল’ বা ‘স্পর্শ ছাড়াই ভ্রমণ’ অর্থাৎ ফ্লাইটে ‘চেক ইন’, বায়োমেট্রিক পরীক্ষা, পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট যাচাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতে পারে কোনো ধরনের স্পর্শ ছাড়াই। কারণ বিমানবন্দরে ‘চেক ইন’ কাউন্টারে ভিড়, ইমিগ্রেশনে পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় সেখানে কর্মীদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি থাকে। তাই পুরো প্রক্রিয়াটি অটোমেশন করতে হতে পারে। এ ব্যবস্থায় আগামী দিনে যাত্রীদের বিমানবন্দরে আসার আগেই বাড়িতে বা হোটেলে বসে অনলাইনে ‘চেক ইন’ করা ছাড়াও অভিবাসন বিভাগকে আগাম তথ্য দিতে হতে পারে।
তবে করোনার টিকা আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর ঝুঁকির বিষয়েই দৃষ্টি থাকবে। যাত্রীদের সম্মতি নিয়েই তাঁদের ভ্রমণের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণের জন্য ট্রাভেল কম্পানি, এজেন্ট ও এয়ারলাইনসগুলো যাত্রীর বয়স, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও ভ্রমণ ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করতে পারে।
ইতিমধ্যে এমিরেটস তাদের যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। ইউরোপীয় বিমানবন্দরগুলো যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে বিমানবন্দরগুলোতে আরো ব্যাপক পরিসরে থার্মাল ক্যামেরা দেখা যাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন করোনার উপসর্গ ও কন্টাক্ট ট্রেসিং যাচাইয়ে বেশ কিছু অ্যাপস চালু আছে। অ্যাপল ও গুগল একটি কন্টাক্ট ট্রেসিং সফটওয়্যার চূড়ান্ত করার পর্যায়ে আছে। আগামী দিনগুলোতে ভ্রমণের প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতাই ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে।