করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু অর্থনীতিতে গতি আনতে গেলে লকডাউন তুলে নেওয়া উচিত। এই সংঘাতে কোন পথে যাওয়া উচিত তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কারণ প্রাণঘাতী করোনার কারণে প্রায় স্থবির পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। বাংলাদেশও তালিকার বাইরে নেই। দেড় মাসের লকডাউনে এরই মধ্যে চাপে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে চাপ পড়বে অর্থনীতিতে। ফলে লকডাউন তুলে না নিলে করোনায় যত মানুষের মৃত্যু হবে, অনাহারে মারা যাবেন তার চেয়ে বেশি মানুষ। এ অবস্থায় সরকারের নেয়া উদ্যোগে সুশাসন নিশ্চিত না হলে ঝুঁকিতে পড়বে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি। পরিবারের ব্যয়ভার বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকেও।
Read More News
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গেল এক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ এগিয়েছে দেশ। তবে, বেড়েছে আয় বৈষম্য, গড়ে ওঠেনি উপযুক্ত মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাই করোনার ধাক্কায় কিছুটা বেসামাল হতে পারে অর্থনীতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী বলেছেন, কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সারি লম্বাই হবে, যা সমাজে মারাত্মক অস্থিরতা তৈরি করবে। ক্ষুধার কারণে মনুুষ্যত্ব লোপ পাবে। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। মানুষে মানুষে হানাহানি বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, কর্মহীনতা সব সময় আমাদের জন্য একটা অভিশাপ। যে কোনো দেশকে পিছিয়ে দেয় এই বেকারত্ব। আর এবারের সংকটটা একটা নতুন সংকট। এটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। কেউ বুুঝতেও পারিনি যে এতটা ভয়ঙ্কর হবে। এটা এক ধরনের সামাজিক যুদ্ধ, অর্থনৈতিক যুদ্ধ, এমনকি এটা জীবনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে যারা জিতবে, তারাই বেঁচে থাকবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, ক্ষুধার্ত মানুষ অপরাধে জড়াবে। এ জন্যই সবার আগে মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে মানুষকে কাজ দিতে হবে। তবে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সবার আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। জীবনই যদি না বাঁচে তাহলে খাবার দিয়ে কী হবে। আবার বাঁচার জন্য খাবারের প্রয়োজন হবে। ফলে দুটোকেই গুরুত্ব দিতে হবে।