জাতীয় পার্টি আর কোনো দলের লেজুরবৃত্তি করবে না : এরশাদ

বড়ই অভাব। মানুষ তা বুঝতে পারছে না। সমাজে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। জনগণের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে দেশ এভাবেই চলবে। জাতীয় পার্টি ছাড়া এদেশে আর কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আর ভবিষ্যতে পারবেও না।

আজ ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এরশাদ একথা বলেন।

এসময় তিনি খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকনকে তৃতীয়বারের মত সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে দ্বিতীয় বারের মত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির নুতন কমিটি ঘোষণা দেন।
Read More News

রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের জারা নেহা কনভেনশন সেন্টারের মুসকান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের, মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী পার্টিার প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা পার্টির সভানেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিনের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী।

ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকনের সভাপতিত্বে এবং পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সহ সভাপতি মশিউর রহমানের যৌথভাবে পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হোসাইন মৌসূমী, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান, জেলার নেতা ডা. আলাউদ্দিন, শাকিল আহম্মেদ, জুয়েল আহম্মেদ, মুনীর হোসেন সরকার, সেলিম সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মুর্শেদা আক্তার প্রমুখ।

এসময় পার্টির কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) খালেদ আখতার, যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফ খান, বাহাউদ্দিন আহম্মেদ বাবুল, দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরশাদ বলেন, দেশব্যপী চলছে জুলুম, নির্যাতন, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। মানুষ অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে চায়। মানুষ মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে চায়। দেশবাসী শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তারা দাঙ্গাহাঙ্গামা পছন্দ করে না। মানুষ কাজ চায়। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ চায়। দেশবাসীর এ প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে জাতীয় পার্টিকে সাংগাঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে হবে। এক সময় যারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে গেছে আজ তারা জাতীয় পার্টির পতাকাতলে ফের আসতে শুরু করছে। তারা বুঝতে পেরেছে জাতীয় পার্টিই সঠিক। এ রাজনৈতিক দলটিই একমাত্র জনগণের স্বপক্ষের দল।

এরশাদ বলেন, আজ দেশে শান্তি নেই, সুখ নেই। সবার মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা। এখন ব্যাংক ডাকাতি ও লুটতরাজ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে। দেশে কোনো কর্মসংস্থান নেই। লাখ লাখ যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে হন্যে হয়ে কর্মসংস্থান খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কাজ না পেয়ে আজ তারা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন বাড়ছে বেকারত্বের অভিশাপ। এ আভিশাপ থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা না গেলে সমাজ থেকে এ অস্থিরতা কোনোভাবেই কমবে না। মানুষের অশান্তি কোনদিনই লাঘব হবে না।

এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কোনোদিনই পূরণ হবে না। জাতীয় পার্টির সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকার সময় এদেশে অর্থ, শিল্প ও কৃষি বিপ্লব হয়েছিল। জাতীয় পার্টির নয় বছরের শাসনামল ছিল এদেশের স্বর্ণযুগ।

জিএম কাদের বলেন, দেশে এখন সন্ত্রাস এবং লুণ্ঠনের এক মহোৎসব চলছে। এভাবে একটি দেশ বেশিদিন চলতে পারে না। এর অবসান জরুরি।

তিনি বলেন, বাঙ্গালীর এখন বড় দুর্দিন যাচ্ছে। কারো মনে সুখ নেই, শান্তি নেই। দেশে এখন চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। একশ্রেণীর মানুষ শাসকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আরেক শ্রেণীর মানুষ দিনের পর দিন শোষিত হচ্ছে। দূর্বল আরো দুর্বল হচ্ছে, আর সবল আরো সবল হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এখন থেকে সব নির্বাচনে অংশ নেবে। এককভাবে নির্বাচন করবে। কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না। এখন থেকে কর্মীরা নেতা নির্বাচন করবে। উপর থেকে কাউকে নেতা হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হবে না।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে হবে। আসন্ন কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে দল ঘুরে দাঁড়াবে। নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করা হবে। ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রান কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, যারা সুবিধাভোগী, সুযোগ সন্ধানী এবং দল ভাঙ্গা-গড়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো- তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ আবার জাতীয় পার্টিকে পেছন থেকে ছুড়ি মারতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

সালমা ইসলাম বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের উন্নয়নের ছোয়া ৬৮ হাজার গ্রামের প্রতিটি প্রান্তে লেগে আছে। আমরা সবাই তার নেতৃত্বে সকব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সারা বাংলার মানুষ আজ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। একমাত্র জাতীয় পার্টিই পারে বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, দেশে এখন চরম ক্রান্তিকাল চলছে। একদিকে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক লুট হচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টিই একমাত্র মানুষের আশা ভরসার যায়গা। দেশের মানুষ মনে করে এরশাদ এবং তার দল জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকলে তারা ভালো থাকবে। লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি বন্ধ হবে।

ফয়সল চিশতী বলেন, বিএনপি মুখে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কথা বললেও তারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে সেই রাজনীতি অনেক আগেই বিসর্জন দিয়েছে। মানুষ মনে করে জাতীয় পার্টিই একমাত্র দেশের প্রকৃত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির ধারক ও বাহক। তাই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে।

রেজাউল ইসলাম ভুইয়া বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট হয়ে গেলো, কিন্তু সরকার নির্বিকার। তাদের ভাব দেখে মনে হয় কিছুই হয়নি।

খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন বলেন, বহু চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *