তামিম ইকবালের অমরত্ব নিশ্চিত করা সেঞ্চুরিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন বা মূল পর্বে চলে গেলো বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করে ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। তাতে ওমানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ২ উইকেটে ১৮০ রান তুলেছিল টাইগাররা। বৃষ্টি দুই দফা বাধা দিলো। বৃষ্টি আইনে শেষ পর্যন্ত ১২ ওভারে ১২০ রানের টার্গেটে খেললো ওমান। কিন্তু তারা হারলো ৫৪ রানে। ধর্মশালায় প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ওমানকে টাইগার বোলাররা থামিয়েছেন ৯ উইকেটে ৬৫ রানে। ১৬ মার্চ কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এটি ছিল ২৬ বছরের তামিমের ইতিহাস গড়ার দিন। কতো কিই না করলেন এক ইনিংসে! ৬৩ বলে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কায় চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকলেন।
Read More News
এক ইনিংসেই ম্যাচের সেরা তামিমের নামের পাশে যোগ হলো অবিস্মরণীয় সব অর্জন। দেশের ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান তিনি। এটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলার পথেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সপ্তম সেঞ্চুরিয়ান এই ব্যাটসম্যান। তিন সংস্করণের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি তামিম। তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি করা ইতিহাসের মাত্র ১১তম খেলোয়াড়। অনেক গুলো রেকর্ডে তামিমের নাম মুছে যাবে না কখনো। তামিমের ইনিংসের চাপে ওমান শুরুতেই চাপে পড়েছে। ৭ ওভারে ৪১ রানে ২ উইকেট হারায় তারা। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। আবার খেলা শুরু হলে তাদের টার্গেট ছিল ১৬ ওভারে ১৫২। কিন্তু ৮.২ ওভারের সময় আবার বৃষ্টি। তখন ৪ উইকেটে ৪৫ রান ওমানের। বৃষ্টি থামলে নতুন টার্গেট ১২ ওভারে ১২০।
তার মানে সুপার টেনে খেলতে ২২ বলে ৭৫ রান করতে হতো ওমানকে। সাকিব আল হাসান ৩ ওভারে ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছেন ওমানকে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরুটা ধীর ছিল বাংলাদেশের। তামিম কি করতে যাচ্ছে বোঝা যায়নি কিছুই! তামিম ফর্মে আছেন। কিন্তু একটু সেট হয়ে খেলেন। সৌম্য সরকার চাইছিলেন মারতে। পেসার বিলাল খান ও স্পিনার আমির আলির বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি। তামিম পঞ্চম ওভারে অজয় লালচেতাকে বাউন্ডারি মেরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ১১ রান দরকার ছিল তার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২৯ রান তোলে বাংলাদেশ। সৌম্যর ব্যাটিং চোখে লাগছিল। শেষ পর্যন্ত দলের ৪২ রানের সময় লালচেতার বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। ২২ বলে ১২ রান করেছেন সৌম্য। সাব্বির রহমান ও তামিমের জুটিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সাব্বিরকে শুরু থেকে মারতে হতো। সেটাই করেছেন তিনি। মালিঙ্গা অ্যাকশনের মুনিস আনসারিও হালে পানি পাননি। প্রায় প্রতি ওভারে দশের ওপর রান আসছিল। তাতে প্রথম ৬ ওভারের ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠছিল বাংলাদেশ। তরতরিয়ে ছুটে চলছিল রান। বাউন্ডারি মেরে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন তামিম। পরের বলেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মেরেছেন ছক্কা। ফিফটি পেরোনোর পর বড় শটের দিকে আরো মন দিয়েছেন তামিম। সাব্বির ২৬ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪৪ রান করে বোল্ড হলেন। তামিমের সাথে তার ৯৭ রানের জুটি হয়েছে ওভার প্রতি ১০.৫৮ রানে। এরপর আনসারিকে ছক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তামিম।
এতদিন তার অপরাজিত ৮৮ই ছিলো টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ১৯তম ওভারে ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব নিশ্চিত করলেন তামিম। এক সেঞ্চুরিতেই সারা জীবন গর্ব করার মতো অনেক রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন বাঁ হাতি এই মাস্টার ব্যাটসম্যান। বাউন্ডারি মেরে ইতিহাস গড়ে বাতাসে ঘুষি মারলেন তামিম। উদযাপনের সময় বোঝা গেল, ব্যথা পেয়েছেন কিছুটা। ৬০ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। ১০টি বাউন্ডারি ও ৫টি ছক্কায় সাজানো তা। ৩৫ বলে করেছিলেন ফিফটি। নিশ্ছিদ্র এক চোখ জুড়ানো ইনিংস খেলে তামিম তো ওমানের নাগালের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাচটাকে। শেষ পর্যন্ত সহজেই সুপার টেন নিশ্চিত করা এই ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকলো তামিমের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য।