বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি এবং আরো প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা চুরি থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়ার ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে জনমনে। ঘটনার প্রায় এক মাস পর কেন বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে অবহিত করল, যে দিন চুরি হয়েছে ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক সার্ভারের তথ্য কে মুছে ফেলল, ঘটনার দুই দিন আগ থেকে কেনই বা ডিলিং রুমের সিসি ক্যামেরা নষ্ট ছিল এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মিলছে না কর্তৃপক্ষের কাছে। আবার ঘটনার এক মাস পরে অন্য একটি দেশের পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কেন পুরো তথ্য প্রকাশ না করে আংশিক তথ্য প্রকাশ করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা হ্যাক করে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়েছিল। পরে শ্রীলঙ্কা থেকে ২০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয় আর ফিলিপাইন থেকে বাকি ৬০০ কোটি টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতার কারণে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা চুরি হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায়; যা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রথমে জানানো হয়নি। পরে এ বিষয়ে ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় রিপোর্ট আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি স্বীকার করে। এত বড় একটি ঘটনা কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করছিল বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানাচ্ছিল না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সার্ভারের তথ্য গায়েব : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিলিং রুমের সার্ভার ও কম্পিউটার থেকে তথ্য গায়েব হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারা এ তথ্য মুছে ফেলল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার চুরির ঘটনার বার্তাগুলো মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেছে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা হয়। ফলে বার্তাগুলো যাওয়ার পর ৫টি বার্তা কার্যকর হয়ে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। ওই দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিলিং রুমে সুইফটের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট পরিচালন ব্যবস্থায় প্রবেশ করে কাজ করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এই ক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে সিস্টেমে ঢুকতে আলাদা আলাদা ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড রয়েছে। এই পদ্ধতিতে সিস্টেমে কারা ঢুকল এবং কারা বের হলো সেসব তথ্য ওই সার্ভারে ও কম্পিউটারে থাকার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা তদন্ত করতে গিয়ে ওই সব তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই সিস্টেমে ঢুকতে একটি বিশেষ পাসওয়ার্ড বা এক্সেস লগ রয়েছে। ওখানে সব কর্মকাণ্ডের রেকর্ড থাকে। এগুলো কম্পিউটারের পাশাপাশি সার্ভারেও থাকে। কিন্তু ওই সময়ে কারা কাজ করেছে সেসব তথ্য এখন তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
সিসি ক্যামেরা বন্ধ : ডিলিং রুমটি ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের পূর্ব দিকে কাচঘেরা একটি কক্ষ। এই কক্ষে বিশেষ কার্ড দিয়ে ঢুকতে হয়। এ ছাড়া প্রবেশ করা যায় না। এই কক্ষে দু’টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার চুরির ঘটনার আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিলিং রুমের দু’টি ক্যামেরাই অকেজো ছিল। ফলে কারা কক্ষে কাজ করেছে সেই ভিডিও ফুটেজও নেই। ক্যামেরা দু’টি সচল করা হয়েছে পরে।
ডিলিং রুম সব সময় খোলা না থাকা : আন্তর্জাতিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার প্রায় সব সময়ই খোলা থাকে। বিভিন্ন দেশের সরকারি ছুটির সাথে সমন্বয় করলে এটি শনিবার বেশির ভাগ দেশে বন্ধ থাকে। অনেক দেশে সাপ্তাহিক ছুটি শনি ও রোববার। আবার বাংলাদেশে ছুটি শুক্র ও শনিবার। এসব কারণে বৈদেশিক লেনদেনের জন্য ডিলিং রুম প্রায় সব সময় খোলা রাখার নিয়ম রয়েছে। বহুজাতিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও ছুটির দিনে ডিলিং রুম খোলা রাখে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও ছুটির দিনেও ডিলিং রুম খোলা রেখে কাজ করার নজির রয়েছে। কিন্তু রিজার্ভ থেকে ডলার চুরির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিলিং রুম বন্ধ ছিল। ফলে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে বার্তা এসেছিল তা পরীক্ষা করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
তথ্য জানাতে অনীহা : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হলো জনগণের সম্পদ। বাংলাদেশ ব্যাংক তা সংরক্ষণ করে মাত্র। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। অথচ রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বেহাত হওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশে শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক অনীহা প্রকাশ করে আসছিল। এমনকি ঘটনা ঘটেছে ৪ ফেব্রুয়ারি আর ঘটনা স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ৭ মার্চ। এই ৭ মার্চের আগে এত বড় একটি ঘটনা সম্পর্কে জানেননি স্বয়ং দেশের অর্থমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। শুধুু তা-ই নয়, ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মূল ঘটনার কোনো বিশদ বিবরণ না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রক্ষিত স্থিতি থেকে ‘হ্যাকড’ হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অর্থের একাংশ ইতোমধ্যে আদায় করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থের গন্তব্য শনাক্ত করে তা ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট ফিলিপাইনের এন্টি-মানিলন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সাথে সক্রিয় রয়েছে বলে কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করে। তবে ওই দিনও বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়নি এ ঘটনায় আরো প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বেহাত হতে চলছিল। ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম জানায়, ১০১ মিলিয়ন ডলারের বাইরে অতিরিক্ত ৮৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্যাকড হয়েছিল, যা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ফিলিপাইনে গিয়েছিল। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সন্দেহ হওয়ায় এ বিপুল অর্থ জব্দ করা হয়। পরে সে অর্থ ফেরত যায় ফেডারেল রিজার্ভে। এভাবেই রা পায় বাংলাদেশের টাকা।
Read More News
তখনো এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনের গণমাধ্যমের বরাত দিয়েই সে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম।
পরদিন ফিলিপাইনের পত্রিকার বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা স্বীকার করেন। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রের সম্পদ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুরু থেকেই এ রাখঢাকের রহস্য কী?
যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠিয়ে তদন্ত দল পাঠায় ফিলিপাইনে : কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত রিজার্ভ চুরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ তদন্ত দল যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠিয়ে পাঠানো হয় ফিলিপাইনে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ঘটনার এক মাস পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে তদন্তে আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চেয়েছে। তাদের মাধ্যমে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্তাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
যেসব প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের নামে টাকা উত্তোলন করা হয় : ফিলিপাইনের স্থানীয় পত্রিকা ইনকোয়ারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধের কথা বলে ওইসব ডলার হাতিয়ে নেয়া হয়। ভাসকুয়েজের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঢুকেছিল কাঁচপুর, মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জাইকার কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের কথা বলে। অথচ ওই ঋণের সাথে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। আইটি প্রফেশনাল লাগ্রোসাসের অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ডলার নেয়ার েেত্রও জাইকার ঋণ শোধের কথা বলা হয়। অথচ জাইকার সাথে তার কোনো সংযোগ নেই। এখানে দেখানো হয় ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের নামে ওই ডলার দিয়ে ঋণ শোধ করা হবে। একটি আইপিএফএফ প্রকল্পে কনসালট্যানসি ফি হিসেবে ক্রুজের অ্যাকাউন্টে নেয়া হয় ৬০ লাখ ডলার। আর ভেড়ামারা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্সি ফি হিসেবে বাকি ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঢোকে ভারজারার অ্যাকাউন্টে।
ব্যাংকের সিস্টেমে ম্যালওয়ার বসিয়েছিল হ্যাকাররা : বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে থাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ বেহাত হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সন্দেহ অজ্ঞাত হ্যাকাররা ম্যালওয়ার বা ‘তিকর সফটওযার’ ব্যবহার করে ওই অ্যাকাউন্টের লেনদেনের ওপর নজর রাখছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার দু’জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, সম্ভবত ওই হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে কয়েক সপ্তাহ ধরে লেনদেন পর্যবেণ করেছিল এবং কখন কিভাবে টাকা হাতিয়ে নেবে তার ফন্দি করেছিল।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই ম্যালওয়ারের কিছু নমুনা এবং ঠিক কিভাবে তা ব্যবহার করা হয়েছিল তা তারা বের করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যূহ ভাঙার এক মাসেরও বেশি সময় পর হ্যাকাররা প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরি করার চেষ্টা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ব্যাংকের কেউ জড়িত ছিল এমন প্রমাণ তারা এখনো পাননি, তবে ব্যাংকিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ এমন কেউ হয়তো এতে সহায়তা করেছে বা তারা ব্যাংককর্মীদের ওপর নজরদারি করে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন, তাদের কম্পিউটার সিস্টেমে দুর্বলতা ছিল এবং এ সমস্যা পুরোপুরি ঠিক করতে দুই বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা প্রয়োজন : এত বড় একটি ঘটনার সাথে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত তা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার যে সফটওয়্যার আছে তাকে এমন লোক দিয়েই পরীা করাতে হবে, যাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সব গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপদ বলে ছাড় দেয়। কারণ ভেতরের কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়া এ ধরনের হ্যাকিং সহজ নয়। আর যদি কোনো অভ্যন্তরীণ সহায়তা পায়, তাহলে সেটা অনেক সহজ বলে মতামত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর।
এ দিকে প্রভাবশালী এক ডিজিসহ ১০ কর্মকর্তার গতিবিধি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, ‘সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর মাধ্যমেও হ্যাকাররা কাজটি করে থাকতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের সাথে যুক্ত ব্যাংককর্মীদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অপরাধীরা সবসময় সেখানে নজর রাখে এবং বোঝার চেষ্টা করে কোন সময়গুলোতে এবং কিভাবে লেনদেনবিষয়ক নির্দেশনাসহ ই-মেইল ওই কর্মীদের কাছে পাঠানো হয়। সেই নির্দিষ্ট সময় এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হ্যাকাররা। তবে এর সাথে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকাটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন তারা। তবে সন্দেহভাজন কর্মকর্তার গতিবিধি পর্যবেণ এবং নজরদারি চলছে বলে জানান তারা। তারা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানতো হ্যাকাররা। ব্যাংককর্মীদের মাধ্যমে অথবা তাদের পেছনে সফলভাবে গোয়েন্দাগিরি করে তারা সব তথ্য জোগাড় করত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উইলিয়াম গোর সই জাল করেন আরসিবিসি ব্যাংকের ম্যানেজার
এ দিকে ফিলিপাইনের মুদ্রা ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচারের অন্যতম সন্দেহভাজন উইলিয়াম সো গো বাংলাদেশের আট কোটি ১০ লাখ ডলার পাচারের দায় অস্বীকার করেছেন। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের শাখা ম্যানেজার মারিয়া সান্তোষ দুগুইতির ওপর এ দায় চাপিয়েছেন। উইলিয়াম গো বলেছেন, তিনি অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত নন। তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দুগুইতি তার স্বার জাল করেছেন। এ ঘটনা ঘটেছে মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিটে ওই ব্যাংকের শাখায়। এ শাখার ব্যবস্থাপক হলেন দুগুইতি।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়াম সো গো’র পে এসব কথা বলেন তার আইনজীবী র্যামন এসগুয়েরা। তার আইনজীবী র্যামন বলেছেন, তার মক্কেলের নামে আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখায় যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তা ভুয়া। এতে সো গো’র যে স্বার রয়েছে তা জাল করেছেন ওই ব্যাংকের ম্যানেজার মারিয়া সান্তোষ দুগুইতি। ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকুইরায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গত শুক্রবার জাপান যাওয়ার পথে একটি বিমান থেকে দুগুইতি, তার স্বামী ও সন্তানকে নামিয়ে দেন দেশটির অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা। তিনি সেখানে আর্থিক এই কেলেঙ্কারিতে তদন্তের মুখে রয়েছেন। তাকে সিনেটের কমিটিতে শুনানিতে তলব করা হয়। উইলিয়াম সো গোর পে তার আইনজীবী বলেন, সান্তোষ দুগুইতি আমার কাছে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স তার ব্যাংকে সেঞ্চুরিটেক্সের নামে জমা করতে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। পরে তিনি ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তর করেন। উইলিয়াম সো গো সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডার্সের মালিক। উইলিয়াম সো গোর আইনজীবি আরো বলেন, দুগুইতি বলেছেন তিনি যা করেছেন তার সবই স্বচ্ছ। এ কাজে অনুমোদন রয়েছে আরসিবিসির প্রধান অফিসের। এসংক্রান্ত এক এফিডেভিটে উইলিয়াম সো গো বলেছেন, তিনি সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিংয়ের মালিক। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন গার্মেন্ট সরবরাহের সাথে যুক্ত তার এ কোম্পানি। আট কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স যে চারটি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে তার একটি অ্যাকাউন্ট এই কোম্পানির। এতে জমা করা ডলার পেসোতে রূপান্তর করে তা অন্যান্য ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। এসগুয়েরার মতে, অন্য একটি ব্যাংকের মাধ্যমে উইলিয়াম সো গো’র সাথে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছিলেন দুগুইতি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বানিফ্যাসিও গ্লোবাল সিটিতে সেরেন্দ্রা রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয় ওই বৈঠক। সেখানে উইলিয়াম সো গোর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার কথা স্বীকার করেন দুগুইতি। অর্থ পাচারের ঘটনা যখন অভ্যন্তরীণ তদন্তে চলে আসে তখন উইলিয়াম সো গো’কে তার অ্যাকাউন্ট ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ বন্ধ করার জন্য কয়েক মিলিয়ন পেসো প্রস্তাব করেছিলেন দুগুইতি। তিনি বলেন, সো গো’কে এ জন্য দুই কোটি পেসো করা হয়।
এ দিকে ব্যাংক ম্যানেজার দুগুইতির আইনজীবি ফারদি তেপাসিও সরাসরি এ অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মক্কেল যথাসময়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করবেন।