পারল না বাংলাদেশ। আরও একবার, তৃতীয়বার, কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসেও আক্ষেপের গল্পই সঙ্গী হলো। আরও একবার হতাশায় পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। আরও একবার মাশরাফিদের সঙ্গী হলো না পাওয়ার বেদনা। যে বেদনা কুরে কুরে খাচ্ছে পুরো বাংলাদেশকে, অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে দিনমজুরটিকে, স্টেডিয়ামে বসে থাকা দর্শক থেকে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে থাকা মানুষটিকে। লড়াইয়ের প্রত্যাশা জাগিয়েও যে আজ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে আট উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
আল আমিনের করা ১৪-তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরেই আনন্দে ভেসে গেলেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সঙ্গী হলেন বিরাট কোহলিও। আর মাঠে থাকা লাল সবুজ জার্সি জড়ানো এগারোজন? হতাশায় মুহ্য! হতাশ গ্যালারিতে থাকা পঁচিশ হাজার দর্শকও। ম্যাচটিকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। সে প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিলেন কোহলি-ধাওয়ান-ধোনিরা।
মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের সৌজন্যে ভারতের সামনে ১২১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। বোলিংয়ে রোহিত শর্মাকে তাড়াতাড়ি ফেরানো গিয়েছিল। এর আগের তিনটি টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার, প্রায় ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে তুলেছিলেন ১৭৫ রান! কিন্তু আজ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন আল আমিন। রোহিত ফিরতেই আশাও জেগেছিল, আজ কিছু একটা হবে! আজ আর আক্ষেপে পুড়তে হবে না।
Read More News
কিন্তু রোহিতের পর যিনি এলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ কেন, যেকোনো দলের জন্যই সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম। মিরপুরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৯০ গড়ে রান করেছেন, আজও ধারাটা ধরে রাখলেন কোহলি। প্রয়োজনে এক-দুই, সঙ্গে বাজে বলে চার নিয়ে ম্যাচটাকে বাংলাদেশের হাত থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। প্রতিটি বলে, প্রতিটি শটে যেন দেখিয়ে দিচ্ছিলেন, কেন তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
কোহলিকে সঙ্গ দিয়ে গেলেন ওপেনিংয়ে নামা শিখর ধাওয়ানও। পুরো টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ১৯। কে জানত, আজ ফাইনালেই নিজের সেরাটা ঢেলে দেবেন এই বাঁহাতি। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের জাতটাও চিনিয়ে দিয়ে বলে রান করেছেন ধাওয়ান।
বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন, তবে কোহলি-ধাওয়ানকে কৃতিত্বটা দিতেই হবে টি-টোয়েন্টির দাবি মেনে অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য। ব্যাটের রেশমি পেলব ছোঁয়ানো শট, বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জায়গা বুঝে রান বের করে নেওয়া…এই বিষয়গুলোই তো ম্যাচটা বাংলাদেশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।
তবে দুজনের ভালো ব্যাটিং মেনে নিয়েও কিছু ‘ইশ’-এর আক্ষেপ থেকে যায়। কিছু ‘অল্পের জন্য’ দুঃখ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কী হতো পঞ্চম ওভারে ওভাবে ক্যাচ হতে হতেও কোহলির শটটা চার না হলে, কী হতো ১১ আর ১২—টানা দুই ওভারে দুবার অল্পের জন্য ক্যাচ না হয়ে চার না হলে, কী হতো আবু হায়দারের প্রথম ওভারে স্লিপে দুটি চার না হলে…। আর কী হতো সাকিব দুদিন আগে ওভাবে চোট না পেলে। কখনো ক্যাচ মিস, কখনো ভুল শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়া, এই সমালোচনাগুলোকে ঝেড়ে ফেলার সুযোগ আজ নিতে পারতেন সাকিব। কিন্তু চোটের কারণেই হোক, আর ফর্মের কারণেই হোক, সাকিব পারলেন না। ব্যাট হাতে তবু কিছু রান করেছেন, বল হাতে ছিলেন বেশ খরুচে!
তবে এত আক্ষেপের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট ব্যাপার ছিল যেগুলো বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে আশা জাগাবে। সবার আগে থাকবে মাহমুদউল্লাহর অমন ব্যাটিং আর সাব্বিরের নির্ভরতা। শুরুতে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে যে ১২০ রান এনে দিলেন এ দুজনই। মাহমুদউল্লাহ ১৩ বলে ৩৩, সাব্বির ২৯ বলে ৩২। এর বাইরে কাল ম্যাচের ইতিবাচক দিক? শেষ দিকে ধাওয়ানের শটে সৌম্যর ওই দুর্দান্ত ক্যাচ, পুরো ইনিংস জুড়ে শেষটা না টানতে পারলেও মাঠে প্রতিটি শটে তাসকিন-মাহমুদউল্লাহদের ওভারে ঝাঁপিয়ে পড়া—একদিন পর শুরু হওয়া বিশ্বকাপে এগুলোই তো বাংলাদেশকে ভরসা জোগাবে। অন্তত বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলতে পারে না, এই শঙ্কা নিয়ে তো যেতে হচ্ছে না।
শিরোপা আসেনি তো কী হয়েছে! বড় পরীক্ষা সামনে। এশিয়া কাপের আক্ষেপ নিয়ে এখন পড়ে থাকার সময় কোথায়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ১২০/৫ (তামিম ১৩, সৌম্য ১৪, সাব্বির ৩২*, সাকিব ২১, মুশফিক ৪, মাশরাফি ০, মাহমুদউল্লাহ ৩৩*; অশ্বিন ১/১৪, নেহরা ১/৩৩, বুমরাহ ১/১৩, জাদেজা ১/২৫, পান্ডিয়া ০/৩৫)
ভারত: ১৩.৫ ওভারে ১২২/২ (রোহিত ১, ধাওয়ান ৬০, কোহলি ৪১*, ধোনি ২০*; তাসকিন ১/১৪, আল আমিন ১/৩০, হায়দার ০/১৪, সাকিব ০/২৬, মাশরাফি ০/১৬, নাসির ০/২২)
ফল: ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শিখর ধাওয়ান