আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন তখনকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গতকাল ট্রাইব্যুনালের চত্বরে পলকের ওই ‘স্বীকারোক্তির’ কথা তুলে ধরে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোনো টাওয়ারে আগুন নয় বরং শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। পলককে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল বলেন, জুনাইদ আহমেদ পলক অনেক তথ্য আমাদের দিয়েছেন। তার নিজের কাছ থেকে যেমন পেয়েছি, পাশাপাশি অন্যান্য সোর্স থেকেও যেটা পেয়েছি- যে জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধের যে নাটক করা হয়েছিল সেটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। টাওয়ারে আগুন লাগার কোনো ব্যাপারই ছিল না। সেখানে সে (পলক) স্বীকারোক্তি দিয়েছে- ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও এ মামলাগুলোর প্রধান আসামি শেখ হাসিনার নির্দেশে।
Read More News
সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা আসার পর তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। সে গ্রুপে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়, ‘ইমেডিয়েটলি ইন্টারনেট শাটডাউন কর।’
গণহত্যার যেসব মামলা হয়েছে, তার সম্ভাব্য সাক্ষীরা ‘টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন’ অভিযোগ করে তাজুল ইসলাম বলেন, তাদের নিরাপত্তায় কোনো গাফিলতি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায় নিতে হবে।
আট আসামির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল ২০ ফেব্রুয়ারি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসানসহ আট আসামিকে গতকাল ট্রইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ জানান, এই আট আসামির বিরুদ্ধে ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সাবেক আইজিপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে এক দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলশান-ভাটারা এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সুলতান মাহমুদ।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল কাফি, মিরপুর ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।