করোনা রোগীদের চিকিৎসায় জীবনরক্ষাকারী প্রধান উপাদান অক্সিজেন। ভারতে অক্সিজেন সংকট দেখা দেওয়ায় তরল অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করেছে দেশটি। গত চার দিনে কোনো অক্সিজেনবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল একটি অক্সিজেনবাহী ট্যাংকার খালাস হয় বেনাপোল বন্দরে।
দেশের বর্তমান অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে আমদানি করা অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় দেশে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে। এমনকি অক্সিজেনের অভাবে বাড়তে পারে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ চলাকালে শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহার ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। এমনকি বিকল্প হিসাবে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যা সময়সাপেক্ষ।
শুক্রবার প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এক স্মারকে শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ওই স্মারকে বলেন, করোনাভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ সম্প্রতি দ্রুত বাড়ছে। দেশের হাসপাতাল/ক্লিনিকে করোনাভাইরাসে মারাত্মক আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন হ্রাসের কারণে দ্রুত মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়।
Read More News
এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল/ক্লিনিকে চাহিদা অনুসারে মেডিকেল অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখা প্রয়োজন। তাই দেশে করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহার বন্ধ রেখে শুধু হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
দেশের ৫টি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো : লিন্ডে বাংলাদেশ, স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড, ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড, ডিআর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড।
এর আগে গত বুধবার দেশে যেকোনো সময় অক্সিজেনের ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হতে পারে-এমন আশঙ্কায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সভায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেনের চাহিদা ১৫০ টন। এর মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ সরবরাহ করছে যথাক্রমে ৮০ ও স্পেক্ট্রা ৩৮ টন। সব মিলিয়ে ১১৮ টন। কিন্তু লিন্ডের দুটি উৎপাদন ইউনিট যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য অধিদপ্তর ৩টি নতুন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব উৎস থেকে পাওয়া যাবে ৭৫ টন। তবে বর্তমানে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩৫ টন অক্সিজেন দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লি. দৈনিক ৭ টন, ইসলাম অক্সিজেন ২০ টন এবং এ কে অক্সিজেন লি. ৮ টন সরবরাহ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে, যা বর্তমানে ১৫০ টনে পৌঁছেছে।