রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার (১১ জানুয়ারি) এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম, ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ, ব্যারিস্টার সৈয়দ রিদয়ান হোসেন ও রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। আর ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান ও কাজী এরশাদুল আলম।
নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ পালন করতে হবে।
Read More News
এর আগে গত বছরের ১৫ জুলাই এক আদেশে ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেন আদালত। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ জনের মধ্যে চার জন পুরুষ ও একজন নারী। নিহতরা হলেন- মাহবুব এলাহী চৌধুরী (৫৭), মনির হোসেন (৭৫), ভেরন অ্যান্থনি পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৫০)।
ওই ঘটনায় ৩০ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও ব্যারিস্টার শাহিদা সুলতানা শিলা। পরে ১ জুন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকেও পৃথক একটি রিট আবেদন করা হয়।
এতে গত ২ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে আগুনের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্যরা গত ১৪ জুন প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই সব তদন্ত প্রতিবেদনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। রাজউকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমতি ছাড়াই করোনা আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদন দেখার পর গত ২৯ জুন হাইকোর্ট পৃথক আরেক আদেশে উভয় পক্ষকে সমঝোতা করতে বলেন। এ ছাড়া অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব পক্ষকে বসার জন্য চিঠি দেয়। এরপর সবাই এক বৈঠকে বসে। সেখানে মৃত মনির হোসেনের পরিবারের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। অপর মৃত চারজনের পরিবার এতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় বিষয়টি আদালতকে জানানো হলে বাকি চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেন আদালত।