স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে আজ রোববার বিকেল ৫টায় ঢাকার বনানীর নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, রাবেয়া খাতুনের মৃত্যু দেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা সাহিত্যের প্রসারে তাঁর অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি মরহুমা রাবেয়া খাতুনের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
Read More News
রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাবেয়া খাতুনের মরদেহ রাখা হবে। দুপুর ২টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরহুমার দাফন বনানী কবরস্থানে সম্পন্ন হবে।
রাবেয়া খাতুন দুই পুত্র, দুই পুত্রবধূ, দুই কন্যা ও দুই জামাতাসহ অসংখ্য নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তাঁর বড় ছেলে ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি., চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল এক সময়ের টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও স্থপতি এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ। বড় জামাতা মুকিত মজুমদার বাবু টেলিভিশন উপস্থাপক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক। ছোট জামাতা জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন বিশিষ্ট শিল্পপতি, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক। বড় পুত্রবধূ কনা রেজা বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও পানসুপারীর স্বত্বাধিকারী। ছোট মেয়ে ফারহানা কাকলী সুগৃহিণী।
রাবেয়া খাতুন সাহিত্যের সব শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেছেন। দীর্ঘ জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য পুরস্কারেও।
রাবেয়া খাতুন ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। রাবেয়া খাতুনের বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ ও মা হামিদা খাতুন। আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাস করেন ১৯৪৮ সালে। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গণ্ডির পর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই এ টি এম ফজলুল হক ও রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। প্রয়াত এ টি এম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক। বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালকও তিনি।
উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথাসহ চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ রাবেয়া খাতুনের। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। ‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ও প্রশংসিত হয়েছে সব মহলে।
বাংলা একাডেমি, চলচ্চিত্র জুরি বোর্ড, লেডিস ক্লাব, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, মহিলা সমিতিসহ অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাবেয়া খাতুন। রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তাঁর নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশের দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা।
রাবেয়া খাতুনের প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তাঁর গল্পে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে কয়েকটি। রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন ৫০টিরও বেশি।