অজোপাড়া গাঁয়ের রফিকুল ইসলাম ওরফে বাপ্পী নামের এক নাপিতের প্রেমে পড়েন গাইনি চিকিৎসক আয়েশা ছিদ্দিকা মিতু। সেই প্রেম তাঁকে বাধ্য করে সাজানো-গোছানো সংসার ছাড়তে। আরো বাধ্য করে বাবা-মাসহ সাবেক স্বামীকে ছেড়ে নাপিতকে বিয়ে করতে। ঘটনা ২০১৯ সালের মার্চের।
এ ঘটনার পর ওই বছরের মার্চেই ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর তাঁর মেয়ে মিতুকে অপহরণের অভিযোগে রংপুর নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় আলমনগর কলোনির নরসুন্দর বাপ্পীকে। অভিযোগে বলা হয়, বাপ্পী তাঁর চিকিৎসক মেয়েসহ তাঁর আগের ঘরের এক সন্তানকে অপহরণ করেছেন।
অপহরণ মামলা করার পর পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে মিতু ও বাপ্পীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। কারণ, তাঁরা তাঁদের আগের সবকিছু ফেলে নতুনভাবে জীবন শুরু করেন। যোগাযোগ বন্ধ করে দেন পরিচিত সবার সঙ্গে। চলে যান রংপুর থেকে ঢাকায়। সেজন্য পুলিশ তাঁদের কোনো হদিস বের করতে পারেনি। পরে আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।
Read More News
রংপুর জেলা সিআইডি পুলিশও খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যান। কোনো হদিস মিলছিল না। কিন্তু মামলার বাদী অর্থাৎ মিতুর বাবা বারবার তাগাদা দিতে থাকেন সিআইডিকে। কোনোভাবে তাঁদের খুঁজে না পেয়ে সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি লেখে। চিঠিতে গাইনি চিকিৎসক আয়েশা ছিদ্দিকা মিতুর কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে কিনা তা জানতে চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়ার এক মাসের মধ্যেই চিঠির জবাব পায় সিআইডি। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মিতুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাবসহ মুঠোফোন নম্বর জানিয়ে দেয় পুলিশকে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার রংপুরের আদালতে তোলা হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা মিতু বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি বাপ্পীকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছিলাম।’
আজ বুধবার রাতে রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার (এসপি) বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়ার পর মিতু তাঁর সাবেক স্বামীকে তালাক দেন। এরপর তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এভাবে তাঁরা সংসার জীবন শুরু করেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর গতকাল আদালতে তোলা হয়। সে সময় মিতু আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় পালিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় দেখেছি, মিতু ও বাপ্পীর এক বছরের একটি সন্তান রয়েছে। এছাড়া আগের ঘরের একটি সন্তানও তাঁদের কাছে ছিল। এখন আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁদের কী হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, আয়েশা ছিদ্দিকা মিতু ঢাকার তিনটি চেম্বারে রোগী দেখতেন। এই নিয়ে তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল বলে আমাদের মিতু জানিয়েছেন। আর বাপ্পী তাঁদের দুই সন্তানকে দেখাশোনা করতেন।