রেলওয়ের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রেলওয়ের সচিবের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য কাগজপত্র চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর চিঠি দেয়া হয়। ডিজির বিরুদ্ধে যাত্রীবাহী কোচ কেনায় অযোগ্য কোম্পানির পক্ষে দরপত্র পরিবর্তন, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয় বহিভূর্ত সম্পদ অর্জনসহ একাধিক অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধান কমিটির প্রধান দুদকের সহকারী পরিচালক (মানি লন্ডারিং) মামুনুর রশীদ চৌধুরী। সদস্য দুদকের উপসহকারী পরিচালক সোমা হোড়। এটিমকে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনুসন্ধানকালে কোনো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ অথবা কোনো সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক করা হলে তা দ্রুত লিখিতভাবে দুদকের মানি লন্ডারিং শাখাকে অবহিত করার নির্দেশও দেয়া হয়।
Read More News
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই ডিজির বিরুদ্ধে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দেন। এগুলোতে বলা হয়, রেলে যাত্রী সেবা বাড়াতে ২০১৭ সালে ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনে রেল। কোচগুলো কেনায় অযোগ্য কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করা হয়। যার ফলে কোচগুলো সরবরাহের কাজ পায় ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইনকা। শর্ত পরিবর্তন ও অনিয়মের কারণে কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন করা হয়- এমন অভিযোগ উঠে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে লন্ডনে পাচার, জাল জালিয়াতিপূর্বক জনবল নিয়োগ, লোকাল এজেন্ট বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের নামে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণের বিষয় অনুসন্ধান করছে দুদক।
রেল সচিব বরাবর দেয়া দুদকের সর্বশেষ চিঠিতে ডিজি শামছুজ্জামানের অনিয়মের রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। এতে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রেলওয়ে উপ-পরিচালক থাকার সময়ে শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে এসিআর জালিয়াতির কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেই ঘটনার তথ্য-রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ২০০৬ সালে রেলভবনে সিএমই/প্রজেক্টে থাকার সময়ে বরাদ্দের বাইরে ৮ কোটি টাকা খরচ করার যে অডিট আপত্তি হয়, তার তথ্য-রেকর্ড চেয়েছে দুদক।
এছাড়া ২০১১ সালে রেলভবনে সিএমই/চট্টগ্রামের চেয়ারে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটির রিপোর্টসহ যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে সিএক্স/ কেলোকা/পার্বতীপুরে রিকুইজিশনের ভিত্তিতে শিরিজা মেটাল এবং বিশ্বাস বিল্ডার্স নামের দুটি কোম্পানির নামে রেল ইঞ্জিন মেরামত সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-মেরামতকৃত মটর কতগুলো চালু-বিকল রয়েছে এবং মেরামতের পর কতদিন সচল ছিল এ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়া গত ১০ বছরে শিরিজা মেটাল এবং বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড রেলে সে সব মেরামতের কাজ করেছে তার আর্থিক মূল্য তালিকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফেরদৌস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৭০০ এবং ২৬০০ গ্রুপের রেল ইঞ্জিনের জন্য কানাডা থেকে যেসব মটর সরবরাহ করা হয়েছে সেসবের যাবতীয় তথ্য, রেকর্ডপত্র এবং প্রতিষ্ঠানটি রেল এ পর্যন্ত কতগুলো প্রকল্পে কাজ করেছে কাজের আর্থিক মূল্য কত তারও তথ্য চাওয়া হয়।
শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়েও দুদকের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এতে দেখা যায়, রাজধানীর শান্তিবাগে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। তার সাবেক স্ত্রীকেও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দেন, যা অভিযোগে উঠে এসেছে। পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার প্লট, মিরপুরে সাড়ে তিন কাঠা জায়গা ও যশোরের ঝিকরগাছায় ৬০ বিঘা জমিসহ দুই তলা বাড়ি রয়েছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। দুদুক এসব অনুসন্ধান করছে। যেহেতে দুদক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের অনুসন্ধান করছে- কাজেই সে বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।