সে অনেক দিন আগের কথা। পড়াশুনা করেছিলাম সাহিত্যে ইচ্ছে ছিলো প্রফেসর হবো শুরু ও করেছিলাম কক্সবাজার সিটি কলেজে ও কক্সবাজার কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে। এর মাঝে শখ হলো আইনজীবী হবো।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ল করলাম ভাল ফলাফল নিয়েই, এবার বার কাউন্সিলের বৈতরনী পার হওয়ার পালা।
আজকাল কার নবীন দের মতো কাউকেই চিনতাম না। কে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, কে এটর্নি জেনারেল, কে বার কাউন্সিল ভাইসচেয়ারম্যান,কারা কার্যকরী কমিটির সদস্য কিছুই জানতাম না। জানতাম শুধু আমাকে পাশ করতে হবে, বার কাউন্সিল থেকে সনদ নিয়ে উকিল হতে হবে তাই যত বই বাজারে পাওয়া যায় সব কিনে নিয়েছিলাম। রাতের দশটার পর দরজা জানালা বন্ধ করে নিবিষ্ট মনে প্রস্তুতি।
Read More News
আমার স্বামী তখন কৃষিব্যাংক দোহা জারী শাখার ম্যানেজার বর্তমানে আইন পেশায়। আমি দুকন্যা নিয়ে কক্সবাজারে থাকি স্কুল,কলেজ দুটো সমান তালে চালাচ্ছি সাথে কক্সবাজারে রাজনীতি,সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে গেছি। বার কাউন্সিল পরীক্ষার সময় ও তারিখ নির্ধারিত। সমস্যা হলো দুটো মেয়েকে কোথায় রেখে পরীক্ষা দিতে যাবো। সিদ্বান্ত হলো বড় মেয়ে প্রমা যে এখন চাটার্ড একাউন্টেনডেন্ট সে বাবার সাথে দোহা জারী থাকবে আমি প্রজ্ঞা যে এখন ব্যারিস্টার তাকে কে নিয়ে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসবো। যথারীতি বাসের টিকেট কেটে ভাগনে ইন্জিনিয়ার মাসুদ কে নিয়ে বাসে উঠলাম। রামু পার হওয়ার পর শুরু হলো প্রজ্ঞা কাহিনী আমি বাসে দাবোনা, নামবো, বসবো না, দুধু দাও, বাবা কই? আপু কই? আমি বাসায় যা-বো। শুরু করলো চিৎকার কোন রকমে তাকে নিয়ে দোহাজারী এসে রাস্তার পাশেই কৃষি ব্যাংক দোহাজারী ব্রাঞ্চ ছিলো বাস থামিয়ে তাকে বাবা প্রান, বাবার কাছে নামিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে চলে এলাম ঢাকায় পরীক্ষা দিতে। যথা রীতি আমাদের নানার নামে করা শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজে পরীক্ষা দিলাম। আমি নিশ্চিত পরীক্ষা ভাল হয়েছে পাশ ও করবো।
তখন এতো পরীক্ষার্থী ছিলোনা। পাশ করলাম, ভাইবা দিলাম পরে উকিল হলাম। এখন বারকাউন্সিলের এম,সি, কিউ, লিখিত পরীক্ষা অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর। তারপরও পাশ করছে আমাদের নবীন আইনজীবীরা, আমাদের মেধাবীরা।
হঠাৎ সেদিন একটা পোষ্ট দেখে, আমাদের নবীনদের মিছিলে অঙ্গভঙ্গী দেখে আহত হয়েছি, লজ্জিত হয়েছি।
আমাদের সন্তান এরা!! সন্মানিত ব্যক্তিদের কে সন্মান দিতে হবে, তা না হলে তোমাকে ও একদিন কেউ সন্মান দিবেনা।
ভুলে গেলে চলবেনা আমরা একটি মহান পেশায় যাচ্ছি। আমাদের অগ্রজ ছিলেন শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক, সিনিয়র এড শামসুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইসতিয়াক আহমেদ, সিনিয়র এডখন্দকার মাহবুবুদ্দীন আহমেদ, এড সাহারা খাতুন, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সহ অনেক মহীরুহ।
আমাদের আলোকিত করে রেখেছেন অনেক মহান ব্যক্তিত্ব। বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পিকার সহ প্রায় সাতজন মন্ত্রী আইনজীবী। পথ ভ্রষ্ট হওয়ার সুযোগ এখানে নেই। ভুলে গেলে চলবেনা এটা ধৈর্যের পেশা,পরীক্ষার পেশা। সিনিয়র বলতেন গরীবের জন্য এ পেশা নয়। এখানে সংযত ভাবে চলতে হবে, বলতে হবে, একজনকে সন্তুষ্টই করে নিজের জিনিসটা আদায় করেআনতে হবে। বেয়াদবী করে নয়।
পেশায় আসার আগেই আমাদের যারা অভিভাবক, মুরব্বী, সিনিয়র পিতৃতূল্য তাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে পারিনা, যাচ্ছে তাই বলতে পারিনা।
জানি আমার সন্তান তূল্য অনেকেই আইনের ডিগ্রি নিয়ে চার বছর অপেক্ষা করছে।জীবন থেকে চারটি বছর চলে যাওয়া বিশাল ক্ষতি। এ ক্ষতি পূরনের নয়। আজকে যেভাবে পরীক্ষা বিহীন উকিল হওয়ার জন্য আন্দোলন করছো তখন পরীক্ষা নেয়ার জন্য একটি বিবৃতিই যথেষ্ট ছিলো। তোমরা অনেক মেধাবীরা এখানে আছো।
বার কাউন্সিলে, সুপ্রীম কোর্টে পরীক্ষা দেয়ার জন্য অপেক্ষমান আমার নিজ সন্তান আছে, আমাদের অসংখ্য বিচার পতি মহোদয় দের সন্তানেরা, আইনজীবীদের সন্তানেরা, বারকাউন্সিলের সদস্যদের সন্তানেরা, মন্ত্রীদের সন্তানেরা, সাধারন জনগনের সন্তানের রয়েছে। সবাই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েও কিছু করা সভব হয়নি।
আমি মনে করি তোমাদের পরিচালনা কারী, সিদ্বান্ত প্রদানকারী বা নেতৃত্বদানকারী সঠিক নয়, নিজকে নেতা বানানোর অপচেষ্টা করেছে অনেকে। কেউ পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তোমরা নিজেরা। তোমরা যখন বিপদে পরবে কাউকে পাশে পাবেনা। সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়।
আগামী ১৯ সে ডিসেম্বর বারকাউন্সিলের এনরোল মেন্টের লিখিত পরীক্ষা। মাত্র ছয় দিন বাকী। সবাই পরীক্ষা দিতে ই উদগ্রীব।ছয়দিন ও কমসময় নয়। ইনশাআল্লাহ ভাল করবে।
সবাই আমাদের সিনিয়র প্রতি শ্রদ্ধাবান হই। অন্যের প্ররোচনায়,প্রলোভনে প্রলোভিত না হয়ে, নিজকে নিজের পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে সংযত আচরন করি। নবীন আইনজীবী হিসেবে যারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছো সবার জন্য দোয়া আল্লাহ সবার সহায় হোন।
জেসমিন সুলতানা।
এডভোকেট।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।।