রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের পথে যাত্রা শুরু

নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের আটটি জাহাজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের পথে যাত্রা শুরু করেছে। এতে মোট ১৬৪২জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল ১০টা ২০মিনিটে প্রথম জাহাজটি চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। এর আগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স বাথ জেটি ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে সকাল ৯টা থেকে রোহিঙ্গাদের জাহাজে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়।

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ২০টি বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। রাতে তারা সেখানে অবস্থান করে বলে নৌবাহিনীর একটি সূত্র জানায়।
Read More News

সূত্রমতে, ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্টে চলে আসে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আসা শুরু করে অন্যরাও। আগে থেকে সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা ও খাদ্যসামগ্রী মজুত করা হয়।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয় কয়েক ডজন বাস। এসব বাসকে নিরাপত্তা দিয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসে পুলিশ।

চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য ভাসানচরে মজুত করা হয়েছে প্রায় ৭০ টন খাদ্যসামগ্রী। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ নিজ বাসস্থানেই তারা রান্না করতে পারবেন।

সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হন। ক্যা¤েপ ফিরে তারা অন্যদেরও ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন।

ফলে উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে ঠাসাঠাসির বসবাস ছেড়ে ভাসানচরে যেতে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রাজি হয়েছেন। তবে ৪ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত।

ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে সেখানে যেতে রাজি হয়েছেন। তাদের মতে পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বলে মনে হয়েছে তাদের।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক একটি এনজিওর কর্মকর্তা বলেন, বারবার অভিযোগ উঠেছে এনজিওদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছে না। তাই এবারের যাত্রায় কোনো এনজিও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে বেশ কিছু এনজিও সেখানে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে প্রচার পেয়ে আসছে যে, এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছেন। অবশেষে এই যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন। নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মধ্যে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *