টলিউড নিয়ে মুখ খুললেন শ্রীলেখা

সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে স্তব্ধ নেটিজেনরা। বলিউডে পক্ষপাতিত্বের জন্যই অবসাদে চলে গিয়েছেন তিনি।

টলিউডে এমন কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে লাইভে এসে ডিপ্রেশন নিয়েও আলোচনা করলেন তিনি।

শ্রীলেখা বলছেন, ডিপ্রেশন আছে থাকবে। এটাকে নিয়ে আমি বহু বছর ধরে ফাইট করছি। করব। আমি আত্মহত্যাপ্রবণ নই। একটা সময় ছিলাম। পেশাদার জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যখন একা হয়ে গিয়েছিলেন তখন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়েছিলেন। কখনোই আপোষ করতে পারেননি এবং ঠিক ভাবে মিশতে পারেননি বলে এই পরিণতি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

একেবারে কেরিয়ারের গোড়ার থেকে কথা বলা শুরু করেন শ্রীলেখা। সে সময় দমদম ক্যান্টনমেন্টে থাকতেন অভিনেত্রী। ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন তিনি। ডিপ্রেশন নিয়ে শ্রীলেখা বলছেন,” এটা এমন একটা জিনিস যেটা ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়।” তিনি বলেন, ”কথা বলতে বলতে লাইভে আসলে প্লিজ বলবেন না আমি নাটক করছি। সিনেমার ক্যামেরার সামনে আমি ভালো নাটক করতে পারি। ক্যামেরা অফ হয়ে গেলে সেই অর্থে আমি করতে পারিনা। যার জন্য বহু দাম দিতে হয়েছে এবং এই লাইভ ভিডিওর পরে হয়তো আরও বেশি দিতে হবে যার জন্য আমি প্রস্তুত।”
Read More News

শ্রীলেখা বলছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কেউ নেই। আগেও ছিল না এখনও নেই।” এইজন্যই সুশান্তের সঙ্গে তিনি নিজেকে খুব রিলেট করতে পারছেন বলে জানান। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে যখন এসেছিলেন তখন কারোর তাবেদারি করেননি। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই এই জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন। ওড়িয়া ছবি এবং টিভি সিরিয়াল দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শ্রীলেখা।

শ্রীলেখা বলছেন “প্রথমদিকে আমি নায়িকার কোনও চরিত্র পাইনি। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে এক নম্বরে ছিলেন বুম্বাদা অর্থাৎ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তখন বোনের চরিত্র করেছি। সেকেন্ড লিড করেছি। যদিও আমি জানতাম আমি নায়িকা হওয়ার যোগ্য। কিন্তু সেই সময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম।”

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রীলেখা বলছেন, আমাদের সমাজটাই পুরুষতান্ত্রিক। তাই টলিউড তার বাইরে হবে এটা আমরা আশা করতে পারি। বুম্বাদার কথাতেই সমস্ত কিছু চলত। প্রসেনজিৎ একটা আলাদা চেয়ার থাকত। আমি দেখতাম প্রসেনজিৎ চেয়ারের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন। কিন্তু পরিচালকরা মাটিতে বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। ঋতু দেরি করে শ্যুটিং ফ্লোরে আসত। সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করত। কিন্তু তাও ওকেই নেওয়া হতো পরের ছবিতেও। কিন্তু আমাদের সব সময় প্রমাণ করতে হত যে আমরা সময়ানুবর্তিতা মেনে চলি। কিন্তু প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণা জুটি। এই জুটি তো ভাঙবার নয় । ছবি না চলুক ও তবুও এরাই এখন ছবি করবে।

শ্রীলেখা বলছেন, তাই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে তখন সেকেন্ড লিড বা সাইড ক্যারেক্টার বা টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু টেলিভিশনে বেশি ভালো কাজ পাচ্ছিলেন তিনি। সেই তুলনায় বড় পর্দায় সেভাবে ভালো কাজ পাচ্ছিলেন না। তাই স্থায়ীভাবে তখন টেলিভিশনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলেখা।

তিনি বলছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে আমি কোনও জুটি তৈরি করতে পারিনি। সব নায়ক ততদিনে জুটি বেঁধে ফেলেছেন।” প্রথমে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা তারপর প্রসেনজিৎ অর্পিতা, জিৎ স্বস্তিকা, তারপর স্বস্তিকা পরমব্রত। তাঁর কথায়, যে নায়িকার সঙ্গে নায়কের প্রেম ছিল তারা জুটি হিসেবে কাজ পেতেন। এটা যেন প্যাকেজ ডিল ছিল। আমার কোনও নায়ক পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে প্রেম হয়নি। তাই কাজটা আমায় দেবে কে। তার উপরে আমি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালোবাসি। মহিলা হওয়ার আলাদা কোনো সুবিধা নিতে পছন্দ করি না।”

শ্রীলেখা বলছেন “সাগর বন্যা ছবির শুটিংয়ে আমরা দীঘা যাচ্ছিলাম। ওই ছবিতেই ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী হালদার। আমার গাড়িতে আমি ও আমার মা ছিলাম। তখন একটি অ্যাক্সিডেন্ট হয়। আমি দীঘা হাসপাতালে ভর্তি হই। পরিচালক দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দেখতে আসার সময় পাননি। কারণ আমি তো কেউ নই তখন।”

এই ছবিটি অশোক ধানুকার প্রযোজনায় ছিল। সঙ্গে বাংলাদেশের কোলাবরেশন ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার জন্য শ্রীলেখা সে ছবিতে অভিনয় করতে পারেননি। প্রাপ্য টাকার বিনিময় একটা হরলিক্সের শিশি নিয়ে তাকে দেখতে যান অশোক ধানুকা। তিনি কথা দিয়েছিলেন, একার প্রযোজনায় ছবি করলে শ্রীলেখা কেই নায়িকার চরিত্রে নেবেন। জানান অভিনেত্রী।

শ্রীলেখা জানান, এরপরে অশোক ধানুকার অন্নদাতা ছবির নায়িকার চরিত্রে তিনি সই করেন। খুব আনন্দ পেয়েছিলেন প্রথম বাংলা ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে। কিন্তু অশোক ধানুকা ফোন করে জানান, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে ছবি করতে চান না। কারণ তিনি মনে করেন শ্রীলেখা নায়িকা হলে কেউ টাকা দিয়ে সিনেমা হলে যাবেন না।

শ্রীলেখা জানান এর পরে একদিন স্টুডিওতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে দেখে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বদলে ফিরদৌসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং তার কিছুদিন পরেই অশোক ধানুকা এবং খোদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফোন করে জানান, অন্নদাতা ছবিতে শ্রীলেখাই কাজ করছেন।

শ্রীলেখা জানাচ্ছেন, অন্নদাতা ছবিটি হিট করেছিল। কিন্তু তারপরে আর কোন ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। অন্নদাতা ছবিতে একটি গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স ছিল অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। তখন থেকে প্রেম শুরু হয় অর্পিতা ও প্রসেনজিৎ।

এরপরে অর্জুন চক্রবর্তীর পরিচালনায় টলিলাইটস ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শ্রীলেখা। অভিনেত্রীর কথায়, “সেই সময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অর্জুন চক্রবর্তীকে ফোন করে বলেছিলেন, শ্রীলেখা কে বাদ দাও। আমাকে দাও। আমি কম পারিশ্রমিক এ অভিনয় করব। শুনে খুব কষ্ট লেগেছিল। অর্জুনদা কে ধন্যবাদ যে তিনি আমাকে ছবিটা করতে দিয়েছিলেন। ঋতুকে পরে বলেছিলাম তোমার হা মুখটা ছোট করো। অন্যদেরও কাজ করতে দাও।”

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের উপর আরও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শ্রীলেখা। তিনি বলছেন, “আমরা অনেকেই সমালোচনা করি। কিন্তু ঋতুকে আমি কখনও দেখিনি কোনও খারাপ কথা বলতে। খুব চালাক ও। ও সবার সঙ্গে, যেকোনো বয়সের মানুষের সঙ্গে খুব মিষ্টি করে কথা বলে মোহিত করে দিতে পারে।”

এমনকি শ্রীলেখা জানাচ্ছেন বড় প্রযোজনা সংস্থা না হলে সেই ছবি ইচ্ছাকৃত ভাবেই চলতে দেওয়া হয় না। তার কথায়, “নেপোটিজম ছিল রয়েছে এবং থাকবে।”

কৌশিক গাঙ্গুলী সম্পর্কে শ্রীলেখা বলছেন, ওনার ছবিতে তো শুধু চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কাজ করবেন। সেটা নিজেই কৌশিকদা আমায় বলেছিলেন। জয়া আহসান বোধহয় খুব ভালো অভিনেত্রী। তাই জয়া আহসান তার ছবিতে কাজ পান আমি পাইনা।

সৃজিত মুখোপাধ্যায় কে নিয়েও শ্রীলেখা কথা বলেছেন। অভিনেত্রী বলছেন, “আমি জানি সৃজিত লাইভ ভিডিওটা দেখছে। সৃজিত একসময় আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। কিন্তু যখন ছবি করল তখন আর আমাকে ডাকেনি। হয়তো আমার মত কোনও চরিত্র ছিল না। স্বস্তিকার মতনই চরিত্রগুলো ছিল। তখন স্বস্তিকার সঙ্গে আসলে সৃজিতের একটা প্রেম চলছিল।”

শ্রীলেখার কথায় “আমার মুনমুন সেন, অপর্ণা সেনের মত কোনও মা নেই। আমার রঞ্জিত মল্লিক, সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মত কোনও বাবাও নেই। “

শ্রীলেখা বলছেন শুধু সিনেমা নয় সিরিয়ালেও এরকম হয়েছে। “অঞ্জনা বসু এবং গার্গী রায়চৌধুরী সঙ্গে প্রযোজকের প্রেম হয়েছিল বলে আমার সিরিয়ালের অংশ অনেক কমে গিয়েছিল। আমি জানি আজকের লাইভ এর পরে আমাকে আবার এক ঘরে করে দেওয়া হবে।”

এমনকি শ্রীলেখা এও বলেছেন, “শ্রীলেখা মিত্র কেও কি সুইসাইড করে প্রমাণ করতে হতো যে তিনি কষ্টে আছেন?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *