চীন-ভারত যুদ্ধ হলে বাংলাদেশ চাপে পড়বে: বিবিসি

চীন ও ভারত বিপুল সমরাস্ত্র সম্ভার গড়ে তুলেছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতাও বেড়ে চলেছে। তার পেছনে একটা রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। বর্তমানে ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা বিশ্বজনীন প্রেক্ষাপটে সেটা বেশ বৈরি। বিশ্ব রাজনীতিতে এই দু্‌ই দেশের অবস্থান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের সেই অর্থে কোন মিত্র নেই। তাদের একটি মিত্রদেশ হচ্ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে বলা যায় ভারতের মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান সংঘাত যদি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়ায় তাহলে সরাসরি কোনো দেশের পক্ষে অংশ নিতে বাংলাদেশকে চাপে পড়তে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন)। তারা বলছে, এ ধরনের একটা চাপ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর আছে।

গেল সোমবার (১৫ জুন) লাদাখে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘাতে ২৩ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। ভারতও দাবি করেছে, ওই ঘটনায় চীনের ৪৩ সেনা নিহত হয়েছেন।
Read More News

ওই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে। ভারতের এসব দেশের সামরিক সহযোগিতা বেশ ঘনিষ্ঠ। কাজেই এসব দেশ হয়তো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিকভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে।

বিবিসি বলছে, অন্যদিকে চীনের সেরকম আন্তর্জাতিক মিত্র নেই। রাশিয়া চীনের বন্ধুরাষ্ট্র, কিন্তু মনে রাখতে হবে অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতেরও ঘনিষ্ঠ মৈত্রী ছিল।

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে চীন এবং ভারত, উভয় দেশেরই সুসম্পর্ক আছে। দুই দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধ হয়, তখন বাংলাদেশের ওপর সরাসরি কোনো পক্ষ নেয়ার জন্য চাপ বাড়বে কিনা এমন বিশ্লেষণমূক মন্তব্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জটিল পরিস্থিতিতে পড়বে।

খবরে বলা হয়েছে, এ ধরনের একটা চাপ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর আছে। যেমন ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন যে চীনের সাহায্যে তারা চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করবেন। কিন্তু এই প্রস্তাব যখন বাংলাদেশ চীনের কাছে দেয়, তখন চীন সেটি গ্রহণ করেছিল। এই বন্দর নির্মাণে বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং জাপানের চাপের মুখে বাংলাদেশকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে হয়। পরে বাংলাদেশ জাপানের সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামে সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ করছে।

এ ধরনের চাপ কিন্তু বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই অনুভব করছে। এটা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে তাদের সাধ্যমত কাজ করে চলেছে। তবে যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি যে বেশ জটিল হয়ে পড়বে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের অনেক সমরাস্ত্র চীন থেকে এসেছে। বাংলাদেশি সেনা অফিসাররা চীন থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কিন্তু সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক, সামরিক নয়। এখনো পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশ সে পরিমাণ সমরাস্ত্র কেনেনি। কাজেই এটা একটা জটিল সম্পর্ক। অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি সব দিক দিয়ে।

কাজেই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, চীন এবং ভারত- দুই দেশের সঙ্গেই যাদের এরকম সম্পর্ক, তাদের জন্য বেশ জটিল একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই।

তবে চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ভারত ও চীন উভয়ে বাংলাদেশের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে জন্য আমরা এ দুই দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুব প্রয়োজন। উত্তেজনা প্রশমন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বাংলাদেশ তার বড় দুই প্রতিবেশীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ভারত ও চীন উভয়ে বাংলাদেশের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা আশা করি, দুই দেশ আলাপ-আলোচনা করে তাদের সমস্যা সমাধান করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *