ভিন্ন রকমভাবে ঈদের জামাত আদায়

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে খুলনার কয়রায় চার দিকে শুধু পানি আর পানি। ডুবে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবজি ক্ষেত। শুকনো জায়গা নেই, এর মধ্যে এলাকাবাসীর ঈদের দিনটি কেটেছে ভিন্ন রকমভাবে।

সুপার সাইক্লোন আম্পানের ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা। কয়রায় ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ জায়গায় ৪০ কিলোমিটারের অধিক বাঁধ ভেঙে গেছে।

আজ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েই আদায় করেছেন পবিত্র ঈদের নামাজ। বেলা সাড়ে ১০টায় কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা নদী ভাঙন পাড়ে এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
Read More News

ঈদের নামাজে ইমামতি করেছেন কয়রার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন। নামাজ শেষে সেমাই খেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ তৈরি করতে নামেন এলাকাবাসী। দুপুরে তাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল খিঁচুড়ির।

নামাজ শুরুর আগে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি লণ্ডভণ্ড কয়রার দুর্বিসহ অবস্থা তুলে ধরেন এবং মজবুত বাঁধ নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ বাঁধার কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান।

শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার অন্যরকম এক ঈদ পালন করছি আমরা। স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসে জোয়ারের পানি যখন হাঁটুপানি পর্যন্ত পৌঁছায় তখই শুরু হয় ঈদের নামাজ। প্রায় ছয় হাজার মানুষ নামাজে অংশগ্রহণ করে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবার জন্য ঈদের সেমাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া দুপুরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খিচুরির ব্যবস্থা করেছি।

কয়রা পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩/১৪-২ নম্বর পোল্ডারের (চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চল) অন্তর্ভুক্ত। এর পূর্ব পাশে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ ও উত্তর পাশে রয়েছে কয়রা নদী।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনার নয়টি উপজেলার ৮৩ হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিতে পড়েছে সাড়ে চার লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলা। সেখানে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ৮০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছে প্রায় সাত লাখ মানুষ।

আম্পানের আঘাতে কয়রার চারটি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের ছোটবড়ো পাঁচ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *