তিন মাস ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে দেশের মানুষ। এর মধ্যে এবার উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড় এরই মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
ঝড় নির্ণয়ক বিখ্যাত সংস্থা আকুওয়েদার ১৯৯৯ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন হিসেবে বর্ণনা করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’কে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়ে এটি বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপকূলজুড়ে চরম আঘাত হানতে পারে।
Read More News
আকুওয়েদারের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস প্রদানকারী জেসন নিকোলস আজ মঙ্গলবার বলেছেন, ১৯৯৯-এর উড়িষ্যা সাইক্লোনের পর আম্পান বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোনিক ঝড়। আগামীকাল বুধবারের শেষের দিকে দুই দেশের উপকূলরেখায় এটি আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এখানকার অনুকূল পরিবেশ এটিকে আরো শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করছে।
সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার রাতে আম্পান বঙ্গোপসাগরে এ যাবত কাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হয়ে উঠেছে, এটি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত (ঘণ্টায় ১৬৫ মাইল) অব্যাহত বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে তীব্রতর হচ্ছে।
বাংলাদেশি এবং ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা এটিকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমে সরে যাওয়ার এবং ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নিকটবর্তী হাতিয়া-ভোলা এবং ভারতের দিঘার মধ্যবর্তী দুটি দেশের উপকূলরেখা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুপার সাইক্লোনটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজারের ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দরের ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আকুওয়েদার বলেছে, সর্বশেষ গতিবিধি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আম্পান উপকূলীয় তটরেখ বরাবর এসে একটি সুপার সাইক্লোন অথবা একটি অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, স্থলভাগে আঘাত হানার সময় আম্পান পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ জুড়ে জীবন ও সম্পদের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যাতে যুক্ত হতে পারে ভয়ঙ্কর উপকূলীয় ঝড়, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস।
বাংলাদেশের দক্ষিণে খুবই নিম্নাঞ্চল হওয়ায় আম্পানের প্রভাবের উচ্চ জ্বলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলটি প্লাবিত হওয়ার আশংকা সবচেয়ে বেশি। উপকূল ও চরের নিম্নাঞ্চলে ৫-১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মাঝে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপকূলে আঘাত হেনে ঝড়টি হিমালয়ের উচ্চ পর্বতশ্রেণিতে গিয়ে আরো ঘণীভূত হবে। ফলে, পূর্ব হিমালয় পর্বতমালায় প্রবল বর্ষণের সৃষ্টি করবে। উত্তর-পূর্ব ভারত, ভুটান এবং উত্তর বাংলাদেশ জুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং পূর্ব হিমালয় ও গারো-খাসি এলাকায় ভূমিধসের আশংকা রয়েছে।