শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ফের বিক্ষোভ-মশাল মিছিল

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে চলমান আন্দোলন থেকে দুই ভাগে উত্থাপিত ১৬টি দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার দাবিতে ফের মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একটি মশাল মিছিল বের হয়ে এককিলো ও মেইন গেইট ঘুরে চেতনা-৭১ এর সামনে এসে শেষ হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা চেতনা-৭১ এর সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছেন।
Read More News

স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ সময় শিক্ষার্থীদেরকে আগামীকাল শেষ দিন দাবিগুলো মেনে নিন।, ‘শাবিপ্রবির ছাত্র সমাজ, এক হও, এক হও।’ ১৬ দফা ১৬ দাবি, আজ জেগেছে শাবিপ্রবি। লড়াই লড়াই জিতবে কে, তুমি আমি আর কে?, ছয় দফা দাবিতে গর্জে উঠি এক সাথে। ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এদিকে ৮ই জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ই নভেম্বর সোমবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ডিসেম্বরের শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে আগামী বছরের ৫ থেকে ১৬ই জানুয়ারি করা হয়। একই সঙ্গে ছুটিতে আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ২০শে নভেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু মানববন্ধনের অনুমতি না নেওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডি এসে তা পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ও প্রক্টর বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

মানববন্ধনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধার প্রতিবাদে ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে পরদিন বৃহস্পতিবার ফের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ, সম্মিলিত প্রতিবাদী গান, মশাল মিছিল ও রোড পেইন্টিং করে আসছেন তারা। এছাড়া অর্বাচীন নামে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিক্ষার্থীরা।

ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যেই গত ২৭শে নভেম্বর (বুধবার) ১৬ দাবি সামনে নিয়ে এসে প্রশাসনকে দুইভাগে আল্টিমেটাম দেয় তারা। এর মধ্যে ৬টি আশু দাবি আগামীকাল বুধবার (৪ঠা ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার মধ্যে মেনে নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। এছাড়া আরও ১০টি দীর্ঘমেয়াদী দাবি আগামী বছরের ২৬শে মার্চ এর মধ্যে বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এই দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেওয়ার দাবিতে গত রোববার (১লা ডিসেম্বর) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বরাবর লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।

আশু দাবিসমূহে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, পথচিত্র অঙ্কন, মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন আয়োজনে সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, আসন্ন সমাবর্তন উপলক্ষে হল বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করা এবং বছরে ৩৬৫ দিনই হলগুলো খোলা রাখা, ছেলে ও মেয়েদের হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা চাপিয়ে না দেওয়া, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম কমিয়ে মান বাড়ানো এবং টংগুলোতে ভারী খাবারের ব্যবস্থা করা ও টং খোলা রাখার ক্ষেত্রে সময় বেঁেধ না দেওয়া, রাত দশটা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখা ও নির্দিষ্ট কিছু কক্ষকে রিডিংরুম হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া, সংগঠনগুলোকে কক্ষ ও ভেন্যু বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার অর্থ না নেয়া এবং কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করা।

দীর্ঘমেয়াদী দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেমের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হারে বাসের সংখ্যা, বাসের রুট ও ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধি করা, জিমনেসিয়ামের কার্যকারিতা ও প্রবেশের যৌক্তিক সময়সীমা বৃদ্ধি করা, মেডিকেল সেন্টারের সুবিধা বৃদ্ধি, লাইব্রেরিতে বইসহ রিডিংরুমে প্রবেশের সুবিধা দেওয়া, প্রথম ছাত্রীহল ও একাডেমিক বিল্ডিংগুলোর যথাযথ নামফলক ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন ও হলগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলো ব্যবহার উপযোগী ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করাসহ কেন্দ্রীয় মিলনায়তনকে কনসার্ট উপযোগী করে মান উন্নয়ন ও সংস্কার করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *