বাঙালি নারীর অহংকার ‘শাড়ি’

যুগ পরিবর্তনের হাওয়াতে সবকিছু বদলে গেলেও বাঙালি নারীর সৌন্দর্য প্রকাশের জায়গায় এখনও একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে শাড়ির। বরং বলা চলে বিয়ে, পার্টি, জন্মদিন, পিকনিক, ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, অফিস এবং ঘরেও বাঙালি নারী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শাড়ির উপর নির্ভরশীল। বিয়েতে বেনারসি, অফিস ও পার্টিতে সিল্ক, জর্জেট, শিফন, কাতান, মসলিন এবং ঘরে যেকোনো সুতির শাড়ি নারীর প্রথম পছন্দ।
Read Our More News
বাঙালি মেয়েরা এখন অনেক বেশি সালোয়ার-কামিজ কিংবা পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সাথে সম্পৃক্ত হলেও নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে শাড়ির বৈচিত্র্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। নারীর জীবনে নানা অনুসঙ্গকে কেন্দ্র করে শাড়িতে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। ঘরে পরার শাড়ি জন্মদিনের পার্টি বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে পরার উপযোগী নয় বলে এখন বুটিক হাউসগুলো তৈরি করছে এমন শাড়ি যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। তাই পহেলা বৈশাখে কিংবা ফাল্গুনের প্রথমদিনে শাড়ি আসে এক রূপে, আবার ঈদে বা পূজায় তা দেখা যায় অন্যরূপে।

উৎসবের সঙ্গে বদলে যায় শাড়ির নামও। নানা রঙের সেই শাড়ির কাপড়ের ধরন এবং তার ডিজাইনারের উপর নির্ভর করে কোথাও কোথাও নাম হয়েছে সিল্ক, শিফন, প্রিন্টেড শিফন, জর্জেট, গ্রেগ জর্জেট, নাইলন জর্জেট, ঢাকাই জামদানি, সিল্ক, টাঙ্গাইল সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক, কাশ্মিরি সিল্ক, কাতান, ব্যাঙ্গালুরু শাড়ি, বেনারসি, টিস্যু বেনারসি, চোশা শাড়ি, ব্লক প্রিন্টেড শাড়ি, এমব্রয়ডারি শাড়ি, কোটারি শাড়ি, মনিপুরী শাড়ি, গরদের শাড়ি ইত্যাদি নানা নাম।

বাঙালি নারীর কাছে শাড়ির আজকের যে জনপ্রিয়তা তার পেছনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির অন্দর মহলের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। তখন ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা একপ্যাঁচে শাড়ি পরতেন। আর শাড়ির ভাঁজগুলো বেশ পরিপাটি করে কাঁধের কাছে আটকে দিতেন। শাড়ির সঙ্গে ব্যবহার করতেন নানা অনুষঙ্গ। উপস্থাপনায়ও ছিল বৈচিত্র। যেমন শাড়ি লেহেঙ্গার আদলে ঘুরিয়ে সামনে বা পেছনে আঁচল নিয়ে একটি মাথা কোমরে গুঁজে দিতেন। আর এতে শাড়ি সব সময়ই হয়ে উঠত অনেক আধুনিক, কারণ তখন পোশাকটি হয়ে উঠত শাড়ি লেহাঙ্গার একটি মিলিত রূপের প্রতিফলন। চুলে উঁচু করে খোঁপা বোনা কিংবা চুল ছেড়ে দেওয়াও একধরনের স্টাইল দাঁড়াতো ঠাকুরবাড়ির নারীদের শাড়ি পরার ঢঙের সঙ্গে। ঠাকুরবাড়ির সেই শাড়ির সাজ আজ আধুনিকার শাড়ির সাজেও রূপান্তরিত হয়েছে। তাই বছরজুড়ে এখন নিজের ঐতিহ্য প্রকাশে শাড়ি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে নারীর কাছে এসে জায়গা দখল করেছে।

বসন্ত কিংবা পহেলা ফাল্গুনে খুব উজ্জ্বল হলুদ রং, তার সঙ্গে কমলার বিন্যাস কিংবা লালের প্রাধান্য—এগুলো যেন বসন্তকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। আবার সবুজের নানা শেড কিংবা সবুজের নানা বিন্যাস বসন্ত কিংবা পহেলা ফাল্গুনের শাড়িতে প্রাধান্য পায় অনেক বেশি। অন্যদিকে ঠিক কাছাকাছি সময় ভালোবাসা দিবসের শাড়িতেও সেই প্রাধান্যই দেখা যায়। ভালোবাসা দিবসের শাড়িতে লাল রঙের প্রাধান্য এখন বেশি নজরে আসে। কারণ লাল রংকে মনে করা হয় ভালোবাসার রং। অন্যদিকে একুশের শাড়িতে প্রাধান্য পাচ্ছে সাদা আর কালোর বিন্যাস। সাদা-কালোর সঙ্গে বাংলা অক্ষরের ডিজাইন কিংবা শহীদ মিনার, সেই সময়ের আত্মত্যাগের কথা সহজে তুলে আনে শাড়িতে। পরবর্তীতে সেই বৈশাখ বা এপ্রিল এলেই নারীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরতে অনেক বেশি অভ্যস্ততা তৈরি করে নিয়েছে। অন্যদিকে ঈদ উৎসবে বিভিন্ন রঙের শাড়ি প্রাধান্য পায়।

বাজারে নানা ধরনের নানা ডিজাইনের শাড়ি কিনতে পাওয়া যায়। বুটিক হাউসগুলো প্রতিনিয়ত শাড়ি নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা করে, ফলে প্রতিদিনই বুটিক হাউজগুলোতে নতুন নতুন ডিজাইন সন্নিবেশিত হয়। দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি বিদেশি তথা ভারতের বিভিন্ন এলাকার শাড়িও পাওয়া যায় দামি শো-রুমগুলোতে।

আমাদের দেশে সাধারণত শীত মৌসুমে বিয়ের অনুষ্ঠান বেশি হয়ে থাকে। এ সময় শাড়ি পরার প্রচলনটা একটু বেশি। এ সময়ের পছন্দের শাড়ির তালিকাতে বেনারসি, কাতান, মসলিন শাড়িগুলোই প্রাধান্য পায়। এছাড়া ঢাকা শহরে কিছু অভিজাত এলাকায় গড়ে উঠেছে শাড়ির ব্র্যান্ড শো-রুম, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা এবং এলিফেন্ট রোডে নিজস্ব বা অভিজাত শপিং মলে এসব ব্র্যান্ডের শোরুম রয়েছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *