প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে এদেশে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। তিন দিক দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ২৭১ কিলোমিটার। দুই প্রতিবেশি দেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা এলাকা দিয়ে মাদক আসে। ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা এবং ইঞ্জেক্টিং মাদক অ্যাম্পুল। মিয়ানমার থেকে ঢুকছে সর্বনাশা ইয়াবা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে।
ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেষা এলাকাগুলোর ৪টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়।
Read More News
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের ৪টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং ফেনীতে।
এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেন্সিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ডিএনসি।
এসব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা ঠেকাতে বাংলাদেশের আহবানে ভারত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ফেন্সিডিল ও তৈরির উপকরণ সরবরাহ এবং বহন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি-কোটি পিস ইয়াবা।
কক্সবাজার, কক্সবাজার উপকূলবর্তী সমুদ্রপথ এবং টেকনাফসহ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। ইয়াবা এখন গভীর সমুদ্র দিয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে। ভারত থেকে এসব ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
ডিএনসি’র সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মুয়াংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধূমধূমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালি, বান্দরবানের গুনদুম, নাইখ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে।
ইয়াবা প্রবেশের পথ প্রসঙ্গে ডিএনসি’র অপারেশন্স এবং গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন: আসলে ইয়াবার জন্য মিয়ানমারের পছন্দের বাজার ছিলো থাইল্যান্ড। কিন্তু এরপর আমাদের দেশে এই মাদকের আসক্তের সংখ্যা কল্পনার বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়াবার বড় বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এই বাজারের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার-টেকনাফের স্থল সীমান্তবর্তী ৬০-৭০টি স্পট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। পানিপথে সমুদ্র উত্তাল থাকলে ইয়াবা আসা কিছুদিন কম থাকে। এরপর শান্ত সমুদ্র দিয়ে আবারও বিপুল ইয়াবা আসতে শুরু করে। কক্সবাজার, টেকনাফ সংলগ্ন উপকূলবর্তী সমুদ্রে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানে করে ইয়াবার চালান আসে।