ফের তাবলীগের দু’পক্ষের মারামারি

রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে দু’পক্ষের মধ্যে ফের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে তাবলীগের কেন্দ্রীয় আমীর দিল্লির মাওলানা সাদ কান্দলভীর পক্ষ ও তার বিরোধী পক্ষ বিরোধে জড়ায়। গত বিশ্ব ইজতেমার পর থেকে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই সম্প্রতি দিল্লি থেকে শূরা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক এম ইউনুস শিকদারকে ‘ফয়সাল’ বা সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে মনোনয়নের ঘোষণা আসে। এরপর সাথীরা বা তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের বেশির ভাগই ওই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান।
Read More News

একই সঙ্গে গত শুক্রবার মাওলানা সাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে না মানার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। গতকাল শনিবার এর প্রতিবাদে সাদের সমর্থকরা কাকরাইল মারকাজে আসলে তাতে বাধা দেন সাদ বিরোধী সমর্থকরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার সূত্রপাত। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষের নেতৃস্থানীয়দের মসজিদ থেকে সরিয়ে দেয়। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। পরে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে ৬ নেতাকে কাকরাইল মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী তাবলীগ অনুসারী ও পুলিশ সদস্যরা জানায়, দেশে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ১১ জন শূরা সদস্য। এর মধ্যে ৬ জন শূরা সদস্য আবার ফায়সাল বা সিদ্ধান্তদাতা। তারা তাবলীগ জামাতের যে কোনো সিদ্ধান্ত দেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে শূরা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক এম ইউনুস শিকদারকে নতুন ‘ফয়সাল’ বা সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে মনোনয়নের ঘোষণা আসে। তা মানতে নারাজ দিল্লি মারকাজের আমীর মাওলানা সাদ বিরোধীরা। যাদের বেশির ভাগই হেফাজতে ইসলামের সমর্থক। বাংলাদেশে তাবলীগে সাদের পক্ষে রয়েছেন সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ অন্তত অর্ধেক শূরা সদস্য। অপরদিকে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কাকরাইল মসজিদের খতিব ও পার্শ্ববর্তী উলুম উদ দুনিয়া মাদরাসার মুহতামিম জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বে আরো প্রায় অর্ধেক সদস্য। প্রতি সপ্তাহে তাবলীগ জামাত পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে একজন ফয়সালের ওপর। গত শুক্রবার মাওলানা রবিউল হক এই সপ্তাহের জন্য ফয়সালের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। নতুন ফয়সালের ঘোষণার প্রতিবাদে তিনি শুক্রবার সভায় দিল্লির মাওলানা সাদের কোনো সিদ্ধান্ত এদেশের তাবলীগে মানা হবে না বলে ঘোষণা দেন। এতে তাদের অনুসারীরাও দিল্লি থেকে নয়, তাবলীগের সিদ্ধান্ত দেশের মুরব্বিরা দেবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার থেকে কাকরাইল মসজিদে কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জড়ো করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠে মাওলানা জোবায়েরের সমর্থকদের। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওয়াসিফুল সমর্থকরা। গতকাল সকাল থেকে তারা বংশালের বাবুবাজার ব্রিজের কাছে জিন্দাবাহার মসজিদে জড়ো হন। তাদের মধ্য থেকে ১০ জন সাথীকে কথা বলার জন্য নির্বাচন করা হয়। এরপর সহস্রাধিক তাবলীগ জামাতের অনুসারী সকাল ৯টার পর কাকরাইল মারকাজে এসে পৌঁছান। আগে থেকে পাহারায় ছিল জোবাইয়েরের সমর্থক মাদরাসা শিক্ষার্থীসহ তাবলীগ অনুসারীরা। সাদ বা ওয়াসিফ সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ওয়াসিফ সমর্থক দু’একজনকে মারধর করা হয়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে মসজিদ এলাকা থেকে বের করে দেয়।

সাদ সমর্থক এক সাথী মানবজমিনকে বলেন, তাবলীগের সূচনা ও কেন্দ্র হলো দিল্লি মারকাজ। সারা বিশ্বের তাবলীগের আমীর মাওলানা সাদ। তার সিদ্ধান্তেই ইতিপূর্বে মাওলানা রবিউল হক শূরা সদস্য ও ফয়সাল মনোনীত হয়েছিলেন। এখন তার সিদ্ধান্ত না মানলে তিনি কীভাবে ফয়সাল থাকেন। তাই জিজ্ঞেস করার জন্য আমরা গতকাল জিন্দাবাহার মসজিদে জড়ো হই। আমাদের ১০ সাথীকে কথা বলার জন্য মনোনীত করে দল বেঁধে কাকরাইল মারকাজে আসি। আগে থেকে জড়ো করা কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আমাদের বাধা দেয়। হাতাহাতিতে জড়ায়। এমনকি মুরব্বিদেরকে কিল-ঘুষিও মেরেছে।

মকবুল হোসেনসহ মাওলানা জুবাইয়েরের একাধিক সমর্থক বলেন, আমাদের দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও নেতৃত্বে রয়েছেন আলেমরা। যাদের অনেকেই মাদরাসা পড়ুয়া গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু সম্প্রতি তাবলীগে বাংলা পড়ুয়ারা অনেকে এসে শূরা সদস্য হয়ে গেছেন। তারা তাবলীগকে নিঃস্বার্থ দাওয়াতি এবাদতে না রেখে স্বার্থের পেছনেও ছুটছেন। তাই এসব সমস্যা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকে আসতে হবে কেন? দেশের মুরব্বিরা তাবলীগের সিদ্ধান্ত দেবেন।

এদিকে কাকরাইল মসজিদে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মসজিদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ছয় মুরব্বির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেখানে দুটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তা হচ্ছে, আগামী ১লা মে পর্যন্ত সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মাওলানা জুবায়ের কাকরাইলের বাইরে থাকবেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, দুই গ্রুপের দুইজন করে চার মুরুব্বিকে সাময়িকভাবে কাকরাইলে আসা-যাওয়া না করতে বলা হয়েছে। তারা হলেন- আব্দুল্লাহ মনছুর, ড. এরতেজা হাসান, ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান ও ড. আজগর।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আমরা বহিরাগত সবাইকে বের করে দিয়েছি। মসজিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলবে। এ বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাইরে থেকে কেউ এসে মসজিদে অবস্থান করতে পারবেন না। তবে নামাজ আদায় করা যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে আসার পর তাবলীগ জামাতের নেতাদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করা হবে বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *