নিহত ইউএস-বাংলার কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলার ছোট্ট হিয়া জানেই না তার মা আর ফিরবে না
অনেক ছোট থাকতে নাবিলার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা আরেকটি বিয়ে করায় দাদির কাছেই বড় হন তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে নাবিলার পথচলা। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বিবিএ ফার্স্ট সেমিস্টারে পড়ার সময় পরিচয় হয় আনান আহমেদের সঙ্গে।
২০১৪ সালে নাবিলা-আনান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতেই নিজের বাবা-মার ভালোবাসা পান। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সমর্থনেই কেবিন ক্রু হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ২০১৫ সালে শুরু হয় নাবিলার পেশা। কিছুদিন পর গর্ভবতী হওয়ায় ৬ মাস অবসরে থাকলেও আবারও স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু।
Read More News
২০১৬ সালে জন্ম হয় নাবিলার মতোই দেখতে ফুটফুটে মেয়ে শিশু। খুব শখ করে নাবিলা তার নাম রাখেন ইনায়া ইমাম হিয়া। নাবিলার মেয়ে হিয়ার বয়স এখন ২ বছর ৪ মাস। মায়ের চাকরির জন্য দাদি ও গৃহকর্মীর কাছে থাকতো হিয়া। কিন্তু অফিসে যাতায়াতের সুবিধার্থে মাত্র দেড় মাস আগে উত্তরায় বাসা নেন নাবিলা। মাকে যতক্ষণ কাছে পেতো ততক্ষণই আধো আধো কথায় চলতো হিয়ার আহ্লাদ-আবদার। মাকে সে মাম্মা বলেই ডাকে।
গত ১২ মার্চ যখন হিয়ার মাম্মা বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো তখন তার কী কান্না। কোনভাবেই মাম্মাকে সেদিন অফিসে যেতে দিবে না। হিয়ার মন হয়ত ঠিকই বুঝেছিলো মাম্মা আজ অফিসে গেলে আর তার কাছে ফিরে আসবে না। এখনও কেউ জিজ্ঞেস করলে হিয়া আধো আধো কথায় বলে ‘মাম্মা অফিসে গেসে’। দরজায় কেউ আসলে দেখতে যায় তার মাম্মা এসেছে কিনা। ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠে হিয়া বলে, ‘মাম্মা উপর থেকে পড়ে গেসে, ম্যাও মাম্মার পায়ে কামড় দিসে’।
যে সময় মায়ের আদরে বড় হওয়ার কথা এমন বয়সেই মাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে হিয়া। সে জানে না কখনও তার পছন্দের চকলেট দিয়ে আদর করে জড়িয়ে ধরবে না তার মাম্মা। হিয়া একসময় অনেক বড় হবে কিন্তু, তার স্মৃতিতে মায়ের কিছুই থাকবে না। শুধু ছবি দেখেই চিনতে হবে তার মা নাবিলাকে, যে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
হিয়াকে নিয়ে তার বাবা, দাদি, ফুপু, চাচা সবার একটিই আশা, সে যেন অনেক বড় হয়। বাচ্চাটাকে যাতে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এজন্য সবার কাছে দোয়াও চেয়েছে হিয়ার পরিবার। শুধু তাদের একটাই চাওয়া, হিয়ার জীবন যেন নাবিলার মতো এতো কষ্টের না হয়।