শহুরে মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামের ভূমিহীন চাষী, সর্বত্রই বেড়েছে মিনিকেট-নাজিরশাইল চালের চাহিদা। হঠাৎ করে এত জনপ্রিয়তা পাওয়া চালটি নিয়ে তাই দীর্ঘদিন ধরেই চলছে গবেষণা। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে সত্যিকারের কোন ধান-ই পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কোথা হতে আসছে এ চাল এমন প্রশ্ন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের।
সম্প্রতি জানা গেছে, মিনিকেট নামের ওই চিকন-সরু চাল তৈরি করা হয় বি.আর ২৮ এবং ২৯ ধানের চালকে একটি সুক্ষ্ম মেশিনের সাহায্যে কেটে সরু করা হয়। এরপর ওই সরু চালকে পলিশ করে সাদা ধবধবে ও চটকদার করে আর্কষনীয় করে তোলা হয়। রান্না করলে সরু চালের মত ভাত হয় এবং খেতে ভাল লাগে।
Read More News
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রযুক্তির ব্যবহার কুষ্টিয়ার এক চাল ব্যবসায়ী প্রথম শুরু করেন। এ চালের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায়, পরবর্তীতে বড় বড় কোম্পানী এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বাজারে মিনিকেট চাউলের বিপণন শুরু করে। বর্তমানে এই চালের রমরমা ব্যবসা চলছে। তবে আমরা কি জানি, এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা চাল আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী?
মিনিকেট চাল জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ করে কৃষি গবেষনা ধান গবেষনা ও শেরে- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মেশিনের সাহায্যে চালের উপরিভাগ ছেটে ফেলায় চালের মিনারেল ও ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ মিনিকেট চালের ভাত বেশিদিন খেলে মানব শরীরের কিডনী ও লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আমাদের দেশে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আমন মৌসুমে বহুকাল ধরে নাজিরশাইল দেশী জাতের ধানের আবাদ হয়ে আসছে। এ ধানের চাল অপেক্ষাকৃত সরু এবং খেতে সুস্বাদু বলে এর চাহিদাও আছে বেশ। তবে সম্প্রতি এর ফলন কমে যাওয়ায় চাষিরা এর আবাধ প্রায় কমিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট(বিরি) আমন মৌসুমে বি.আর-৪৯ নামক উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেন। এ জাতের ধানের চাল অন্যান্য উফশী জাতের চালের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সরু। বর্তমানে আমন মৌসুমে এ জাতের ধানের চাষ হচ্ছে এবং ফলনও ভাল। কিন্তু আমাদের দেশের সুবিধাভোগী কিছু চাল ব্যবসায়ী এ জাতের ধান এক সিদ্ধ করে চাল উৎপাদন করে। যা দেখতে অনেকটা নাজিরশাইল চালের মতো। সুতরাং উচ্চ মূল্যে যে নাজিরশাইল নামক চাল বিক্রি হয় তা সত্যিকার ভাবে নাজিরশাইল নয়। তাই উচ্চমূল্যে মিনিকেট-নাজিরশাইল চাল ক্রয় করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবেন না।