মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলছে দেশটির সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন। সেখান থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মুখে সেসব কাহিনীর ভয়াবহতা শুনলে গা শিউরে ওঠে। তাঁরা নিজের সামনে কাছের মানুষগুলোকে হত্যা করতে দেখেছে, জ্বলতে দেখেছে তাঁদের গ্রাম। হানাদারদের পাশবিকতা এখানেই শেষ নয়। রোহিঙ্গা নারীদের ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে তাদের স্বামী-সন্তানের সামনেই। পার পায়নি গর্ভবতীরাও।
ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার। সাধারণত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা যখন বাড়ির বাইরে থাকে তখনই গ্রামগুলোতে হামলা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারপর শিশুদের সামনেই ধর্ষণ করা হয় তাদের।
Read More News
ধর্ষণের আগে রোহিঙ্গা নারীদের মারধর করে সেনা সদস্যরা। থেঁতলে দেওয়া হয় তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। ধর্ষণের শিকার অনেক নারীর শরীরে থেঁতলানো দাগ রয়েছে । এ ছাড়া চিকিৎসা দেওয়ার সময় তাদের বুক ও যৌনাঙ্গে কামড়ের দাগ পাওয়া গেছে। এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনাগুলো আড়ালেই থেকে যায়। কারণ নারীরা লজ্জা ও ভয়ের কারণে এ কথাগুলো কাউকে জানাতে চায় না। এমনকি তাদের পরিবারকেও না।
রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও তাঁরা যুগের পর যুগ ধরে মিয়ানমার রাষ্ট্রের নিগ্রহের শিকার। সম্প্রতি সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে ‘বিদ্রোহীদের হামলার’ পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নতুন করে হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আর এতে তাদের সহযোগিতা করছে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ও মগরা।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার আরেক কর্মী আইরিন লোরিয়া জানান, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গা নারীদের খেলনা হিসেবেই দেখত। তাদের নগ্ন করে গ্রামে প্যারেড করাতো। হেয় করার জন্য বিভিন্ন কুৎসিত কথা বলত। কিন্তু এখন ধর্ষণ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে এমন অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই ভয়ে তা প্রকাশ করছেন না। বর্তমানে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষা করাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সাহায্যকারী বিভিন্ন দেশের কাছে। ফলে ধর্ষণের শিকার নারীদের দিকে অতটাও নজর দিতে পারছে না তাঁরা। কিন্তু মিয়ানমারে এ ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা বিপর্যয়ের আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।