সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের নিয়মিত আলোচনা শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিয়মিত আলোচনা শেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এরপর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকে উপস্থিত ৪০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রায়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সবার সামনে তুলে ধরেন। এরপর তিনি মন্ত্রিসভাকে জানান, রায়টিতে অনেক আপত্তিকর শব্দ রয়েছে।
Read More News
এই পর্যায়ে একজন সিনিয়র সদস্য আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আপত্তিকর শব্দগুলোর মধ্যে কী কী রয়েছে? জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, এখানে সংসদকে ইমম্যাচিউরড (অপরিপক্ব), জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন এবং প্রশ্নবিদ্ধ বলা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি প্রশ্ন করেছি। আমি রায় দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে সংসদকে ইমম্যাচিউরড ও প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমি প্রশ্ন করতে পারি যে ইমম্যাচিউরড ও প্রশ্নবিদ্ধ সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিও প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। আবার তিনি যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না কেন? এই প্রশ্ন আমি করেছি।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
পরে ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। একই বছর ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
চলতি বছরের গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।