শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবার

সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। কেননা, মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি পুরোটা সময় জুড়ে একটা পরিবারের ভেতরই তার জীবন অতিবাহিত করে। মূলত, পরিবারের মাধ্যমেই একটা শিশুর মাঝে প্রাথমিক পর্যায়ের বুদ্ধির বিকাশ হয়, সামাজিকীকরণ ঘটে, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি হয়, শিক্ষা সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মতামতসহ বিভিন্ন বিষয় গড়ে ওঠে।

জন্মের পর একটা শিশুর শিক্ষা জীবনের প্রথম হাতেখড়ি তার মায়ের কাছে। বাবার ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক গঠন, কথাবার্তা, বিচার বিবেচনার ধরন থেকে সেই শিশু নিজের ভেতর গড়ে তুলত সঠিক মূল্যবোধ। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করার ভেতর দিয়ে তৈরি হতো এক ভিন্নরকমের ভালোবাসা বোধ। সবাই একসঙ্গে বসে বিনোদনমূলক বিভিন্ন রেডিও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা, গল্প করা, ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়ার মধ্য দিয়েও শিশুদের মধ্যে বুদ্ধি এবং শিক্ষা সাংস্কৃতিক বিষয়ে বিকাশ ঘটত। রাত্রিবেলা ঘুমোতে যাবার আগে দাদা-দাদী, নানা-নানী কিংবা মা- বাবার কাছ থেকে গল্প শোনার মাধ্যমেও শিশুদের ভেতর বিভিন্ন ক্ষেত্রে কল্পনা শক্তির এক বিশাল ক্ষমতার জন্ম হতো।

কিন্তু আজকাল ব্যস্ততার ভিড়ে কেবলমাত্র রূপকথার গল্প হয়ে বইয়ের পাতায় জমা হয়ে আছে সেসব কথা। প্রতিটা মানুষের জীবনেই নেমে এসেছে যান্ত্রিকতার ছাপ। এমনকি নিজেদের সন্তানদের প্রতি দেবার মতোও তাদের পর্যাপ্ত সময়টুকু নেই বললেই চলে।
Read More News

বাবা-মারা আর তাদের শিশু সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। যে সন্তানের পড়ালেখার অ আ ক খ এর হাতে খড়ি হবার কথা তার মার হাতে, তার বদলে সেই শিশুকেই দেখা যাচ্ছে নির্দিষ্ট বয়সের আগেই স্কুল এবং প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে অর্পণ করা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে, অল্প বয়সেই শিশুর ওপর নানা ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এখন আর ছেলেমেয়েরা বিকেলবেলার অবসরে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতে যাওয়ার সুযোগ পায় না। বাবা-মা তাই সন্তানদের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন- মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি যার মাধ্যমে ভার্চুয়াল গেমস খেলে সময় কাটায় তারা। যার কারণে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও দেখা সাক্ষাত্, কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আন্তরিক যোগাযোগের অভাব সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই তারা ফেসবুক, টুইটারের মতো ভার্চুয়াল যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ে অনায়াসেই। আর তা একসময় মহাআসক্তির রূপ নেয়। রূপকথার রাজা-রাণীর গল্পের বদলে শিশুরা টেলিভিশনে কার্টুন দেখে ঘুমোতে যায়। পেনসিল দিয়ে প্রথম লেখা শেখার অনুভূতিটা তারা কখনোই অনুভব করতে পারে না। কেননা, জন্মের পর থেকেই তারা আইপ্যাড কিংবা কম্পিউটার কি-বোর্ড ব্যবহার করে অভ্যস্ত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে শিশুদের মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কিংবা মস্তিষ্ক বিকৃতির পেছনে উল্লেখিত যান্ত্রিক জীবন অন্যতম ভাবে দায়ী। যেখান থেকে সরে আসতে না পারলে ক্রমেই আমাদের আগামী প্রজন্ম মেধা এবং বুদ্ধিশূন্য হয়ে পড়বে। যা দেশের এবং জাতির জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *