বাড়িতে হামলা হতে পারে, চিন্তাই করেননি লাদেন

জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন তাঁর সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল স্মৃতিচারণা তুলে ধরা হয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসে।

তিনি জানান, ২০১১ সালের ১ মে রাতে বাড়ির বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী নেভি সিলের সদস্যদের দেখে লাদেনের চোখ-মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নেভি সিল ও গোয়েন্দা সংস্থা বারবার বর্ণনা দিয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল আলোচিত শীর্ষ এই সন্ত্রাসীকে। তবে এবারই প্রথম লাদেনের পরিবারের কোনো সদস্য শোনালেন, কীভাবে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে।

ওসামা বিন লাদেনের জীবনের ওপরে একটি বই লিখছেন ক্যাথি স্কট ক্লার্ক ও আদ্রিয়ান লেভি। তাঁদের কাছেই সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন লাদেনের সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল। আমালের ওই স্মৃতিচারণা তুলে ধরা হয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসে।
Read More News

জবানবন্দিতে আমাল জানান, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের একটি বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন লাদেন। ছয় বছর ধরে সেখানে ছিলেন তাঁরা। ২০১১ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার উড়ে আসে।

এ সময় লাদেনের চোখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হেলিকপ্টার লক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা আসছে।’

সেনাসদস্যরা যখন বাড়ির দিকে আসছিল, লাদেনের তিন স্ত্রী তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বাড়ির ওপরতলায়  চলে যান এবং প্রার্থনা করতে থাকেন।  লাদেন তখন তাঁদের নিচতলায় চলে আসতে নির্দেশ দেন। বলেন, ‘তারা আমাকে চায়, তোমাদের না।’ এরপর স্বামীর কাছে সন্তান হুসেইনকে নিয়ে থেকে যান আমাল।

এদিকে, ততক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল সদস্যরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে লাদেনের ছেলে খালিদকে হত্যা করেছে। পথে তাদের সঙ্গে লাদেনের অপর দুই মেয়ে সুমাইয়া ও মিরিয়ামের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ওই বাড়িতে থাকা কেউ একজন সেনাসদস্যদের লাদেনের লুকানোর জায়গাটি (সেফ হাউস) চিনিয়ে দেয়।

একপর্যায়ে সেনাসদস্যরা লাদেনের ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আমাল ও হুসেইন।  সে সময় আমাল তাদের বাধা দিতে গেলে তাঁর পায়ে গুলি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সেনারা। এরপর লাদেনকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গুলি। একটু ধাতস্থ হয়ে লাদেনের কাছে যান আমাল। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে লাদেনের। মায়ের পাশে বসে বাবার হত্যাকাণ্ড  দেখেছিল শিশুপুত্র হুসেইন।

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আমাল বলেন, লাদেনকে হত্যার পর সেনাসদস্যরা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী খাইরিয়াহ, দুই মেয়ে সুমাইয়া ও মিরিয়ামকে তাঁর লাশের পাশে নিয়ে যায়। তারপর লাদেনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। শনাক্তকরণ শেষে লাশ নিয়ে চলে যায় নেভি সিল সদস্যরা।

আমাল জানান, ওই বাড়িতে হামলা হতে পারে, সে কথা চিন্তাই করেননি লাদেন। এ জন্য তাঁর কোনো পূর্বপরিকল্পনাও ছিল না। আর স্বামীর জীবনের শেষ মুহূর্তের ওই বিভীষিকা নিয়ে তাঁরা কোনোদিন আলোচনাও করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *