তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের বিখ্যাত মসজিদ আয়া সোফিয়ায় আজান ও নামাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির সরকার মসজিদটিতে ইমাম নিয়োগ দিয়েছে। ফলে ৮৫ বছর পর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আয়া সোফিয়ার চার মিনারে ধ্বনিত হচ্ছে আজান।
এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে মুসলিম বিশ্ব আনন্দিত হলেও পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমদ জামে মসজিদের কাছে ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া অবস্থিত। এই ইমারতটি প্রথমে ছিল গ্রিকদের মন্দির। তারপর বিখ্যাত খ্রিষ্টান রাজা কনস্টান্টিন এটি পুননির্মাণ করার পর বাইজান্টাইন খ্রিষ্টান বাদশাহ প্রথম জাস্টনিন ৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে আরেকবার নির্মাণ করেন। পাঁচ বছর একটানা এর নির্মাণকাজ চলে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে একে চার্চের মর্যাদা দিয়ে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ৯১৬ বছর ধরে আয়া সোফিয়া ক্যাথলিক চার্চ ছিল। এরপর ১৪৫৩ সালে মুসলমানদের বিজয়ের পর ৪৮১ বছর আয়া সোফিয়া ছিল মসজিদ।
Read More News
জানা যায়, সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর প্রথম একে মসজিদ ঘোষণা করেন এবং এর ওপর একটি উঁচু মিনার নির্মাণ করেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের শাসনকালে এর ওপর আরেকটি সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেন। এখন আয়া সোফিয়ায় চারটি মিনার।
৪৮১ বছর মুসলমানরা এখানে নামাজ পড়েছেন, আজান দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে কামাল আতাতুর্ক আয়া সোফিয়ায় আজান ও নামাজ নিষিদ্ধ করে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। ১৯৯১ সালে আয়া সোফিয়ার পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং মসজিদটির দরজা আয়া সোফিয়ার দিকে খুলে দেওয়া হয়। মানুষ ওখানে নামাজ পড়তে থাকে।
অন্য দিকে রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তুরস্কের ক্ষমতায় আসার পর তিনিই পুরনো মসজিদ আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের দাবিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১৪ সালে আনাতোলিয়ান ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন আয়া সোফিয়াকে মসজিদে পুনঃরূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। এর স্লোগান ছিল ‘জায়নামাজ নিয়ে আয়া সোফিয়ায় চলো’। এই আন্দোলনের সময় আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের দাবিতে দেড় কোটি মানুষ স্বাক্ষর করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে আয়া সোফিয়ার ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করবে।
এরদোয়ানের এবারের সরকার আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারল।
আয়া সুফিয়া পৃথিবীতে স্থাপত্যশিল্পের এক বিস্ময়। এখানে রোম ও তুর্কি স্থাপত্যশিল্পীরা নিজ নিজ সময়ে কীর্তির স্বাক্ষর রেখে পৃথিবীকে চমকিত করেছেন। আজও প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক স্থাপত্যশিল্পের এই বিস্ময় দেখতে আসেন।