টানা ৭৩ দিন অনুপস্থিতির পর সংসদে হাজিরা দিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানা। তবে দায়িত্বশীল কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এদিকে পুলিশের খাতায় মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে দিয়ে সংসদে হাজিরা দিলেও কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের টিকেটে টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি তিনি। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ফারুক হত্যার ঘটনায় এমপি রানা ও তার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশীট দেওয়া হয়। এরপরে ৬ এপ্রিল আদালত মামলার চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতক আমানুরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু গ্রেপ্তার না হওয়ায় ১৭ মে আসামিদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে মালামাল জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। সর্বশেষ ১৬ জুন আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি লিখিত ভাবে স্পিকারকেও জানানো হয়। এদিকে পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি আমানুর রহমান রানা টানা ৭৩ কার্য দিবস সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুলাই সংসদে যোগ দিয়েছিলেন। সংসদ সদস্য পদ রক্ষায় তিনি গতকাল সোমবার সংসদে হাজিরা দিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। সংসদের কর্মচারী ও নিরাপত্তকর্মীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার পর নিজের গাড়িতে করে সংসদে আসেন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানা। তিনি সোজা চলে যান সংসদের ৪ নম্বর লবিতে। তারপর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এরপর উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে রেবিয়ে যান। তবে তার সংসদে উপস্থিত ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করেননি। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। এ বিষয়ে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ কালের কণ্ঠকে জানান, আমিও আপনাদের মতো বিষয়টি শুনেছি। তবে তিনি (রানা) সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে তো দেখতাম। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা খাতা দেখে নিশ্চিত হতে হবে। এদিকে হত্যা মামলার আসামি নিরাপদে সংসদে আসলো, আবার সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল কিভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের গ্রীণ সিগন্যাল নিয়ে সংসদ সদস্যপদ রক্ষায় হাজিরা দিয়ে গেলেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সংসদের আইন কর্মকর্তারা জানান, হুলিয়া আছে বলে কোন সংসদ সদস্যকে সংসদে বা অধিবেশন কক্ষে প্রবেশে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি কোন সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে পারে। আর সংসদ এলাকার বাইরে গ্রেপ্তারের জন্য স্পিকারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে হয়তো ওই সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হবেন না এমনটি নিশ্চিত হয়ে সংসদে এসেছিলেন। যে কারণে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেখেও দেখেননি।
Read More News