দেশজুড়ে অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুরু হওয়া পুলিশের জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে ভুল বার্তা যাচ্ছে বহির্বিশ্বে। বিপুল সংখ্যায় গ্রেফতারের ফলে এই প্রশ্ন উঠছে যে তবে কী দেশে প্রচুর জঙ্গির উত্থান ঘটছে। এ রকম বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার পুলিশকে কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। অভিযানে একজন নিরীহ মানুষ ধরা হলে দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলেছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজ দফতরে ইত্তেফাককে প্রধানমন্ত্রীর ওই বার্তার কথা প্রকাশ করে বলেন, বার্তাটি তিনি মহাপুলিশ পরিদর্শককে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি অবশ্য বলেন, গ্রেফতারের সংখ্যাটি অনেক বড়। কারণ এর মধ্যে অনেক দিনের গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি (ফেরারি) রয়েছে। অনেক মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী বা সমাজের বিভিন্ন ধরনের অপরাধী রয়েছে।
জানা যায়, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আজ বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেন। সেখানে তিনি সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার বা সাধারণ মানুষের হয়রানির বিষয়ে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেন। কী কী অপরাধে কতজন গ্রেফতার হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেন।
প্রসঙ্গত চট্টগ্রামে পুলিশের স্ত্রী হত্যা, নাটোরে খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহে আনন্দ ঠাকুরকে হত্যার পরপরই শুরু হয় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান। এ ঘটনা দেশীয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ নাগরিকদের ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সরকারের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়ায়। এ দেশে ভারতীয় কূটনীতিকরাও বিষয়ের ওপর তীক্ষ নজর রাখছেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের সংগঠন থেকে ঘটনার নিন্দা, উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিকারে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।
পক্ষান্তরে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিদেশি গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে। বহির্বিশ্বের কোনো কোনো গণমাধ্যমে এমনও বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে জঙ্গির সংখ্যা অনেক। আলজাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সিএনএন, এনডিটিভি, বিবিসির প্রতিদিনের প্রতিবেদনে শুধু গ্রেফতারের সংখ্যা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এতজন গ্রেফতার হয়েছে। অর্থাত্ প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে যে গ্রেফতারকৃত সকলেই জঙ্গি!
Read More News
পুলিশের মহাপরিদর্শক অবশ্য দুদিন আগে চট্টগ্রামে বলেছেন, কোনো নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না। তিনি মাঠের পুলিশকে এই বলে সতর্ক করেন যে নিরীহ মানুষ হয়রানি হলে তার দায় সংশ্লিষ্টকেই নিতে হবে।
এদিকে গতকাল পুলিশ সদর দফতর বলেছে, জনমনে ভীতি কমাতে ও সচেতনতা বাড়াতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি জঙ্গিদের হাতে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে কিছুটা আতঙ্ক বা ভীতি বিরাজ করছিল। এই প্রেক্ষাপটেই সবাইকে জানান দিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গি দমনে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেককের বিরুদ্ধে সুর্নিদিস্ট অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গি অভিযানকালে অন্যান্য মামলার আসামিরাও গ্রেফতার হচ্ছে। তিনি বলেন, সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
তিনি এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, গত ১০ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১১ হাজার ৬৮৪ জন। অথচ গত মে মাসে ১০ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছিল ১০ হাজার ৩৩১ জন। সাঁড়াশি অভিযানের সময় অতিরিক্ত গ্রেফতার মাত্র ১ হাজার ৩৫৩ জন।