এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার এবার বেড়েছে। তবে অন্যান্য সূচকে গতবারের মতোই অবনতি ঘটেছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১০ বোর্ডের এবারের গড় পাসের হার ৮৮.২৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৭.০৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১.২৫ শতাংশ। তবে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন; জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দুই হাজার ১৪০ জন কমেছে। গত বছর পেয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় কমেছে। শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠান এবার চার হাজার ৭৩৪টি, গত বছর ছিল পাঁচ হাজার ৯৫টি; কমেছে ৩৬১টি।
Read More News
একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। গত বছর ছিল ৪৭টি, এবার হয়েছে ৫৩টি। পাসের হারে এবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। ছেলেদের পাসের হার ৮৮.২০ শতাংশ ও মেয়েদের পাসের হার ৮৮.৩৯ শতাংশ। তবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ছেলেরা এগিয়ে। ছেলেরা জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৭ জন। আর মেয়েরা জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫২ হাজার ৩৪ জন। তবে এসএসসির তিনটি শাখায় জিপিএ প্রাপ্তির সংখ্যা হিসাব করলে শুধু বিজ্ঞান বিভাগেই ছেলেরা এগিয়ে, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা দুটোতেই এগিয়ে আছে মেয়েরা। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ড চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে রেওয়াজ অনুযায়ী গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ২০১৬ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন। এরপর দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। পাসের হার গত বছরের তুলনায় এবার বাড়লেও সামগ্রিক ফলাফল বিগত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারায় ফিরতে পারেনি। ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৯১.৩৪ শতাংশ। তারও আগে ২০১৩ সালে ৮৯.০৩ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ছিল ৮৬.৩৭ শতাংশ। ফলাফল সম্পর্কে মূল্যায়ন জানাতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অসন্তুষ্ট নই, তবে আরো ভালো প্রত্যাশা করি। আমরা খুশি আছি কিন্তু আমরা অনেক বেশি খুশি হতে চাই। সবাই যেন ভালো করতে পারে সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।’ ফলাফলে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান শিক্ষামন্ত্রী। জিপিএ ৫, শতভাগ পাস স্কুলের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং শূন্য পাস স্কুলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা হবে এবং সে অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫৭ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হলো। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এবার প্রথমবারের মতো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়নি। এ কারণে ফল নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হুড়োহুড়ি অন্যান্যবারের মতো ছিল না। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ দশ বোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার এসএসসিতে পাসের হার ৮৮.৭০ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৮৬.৭২ শতাংশ। বৃদ্ধির হার ১.৯৮ শতাংশ।
১৩ লাখ ২৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৩ জন। এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৭৬৯ জন। গতবারের চেয়ে এবার জিপিএ ৫ বেড়েছে তিন হাজার ১৩৮ জন। গতবার জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৯৩ হাজার ৬৩১ জন। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে এবারও সবচেয়ে বেশি পাসের হার রাজশাহী বোর্ডের—৯৫.৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। পাসের হার সবচেয়ে কম বরিশাল বোর্ডে—৭৯.৪১ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৮৮.৬৭, কুমিল্লায় ৮৪, যশোরে ৯১.৮৫, চট্টগ্রামে ৯০.৪৪, সিলেটে ৮৪.৭৭, দিনাজপুর বোর্ডে ৮৯.৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এসএসসিতে এবার ঢাকা বোর্ড থেকে সবচেয়ে বেশি ৪০ হাজার ৮৩৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১৭ হাজার ৫৯৪, কুমিল্লায় ছয় হাজার ৯৫৪, যশোরে ৯ হাজার ৪৪৪, চট্টগ্রামে সাত হাজার ৬৬৬, বরিশালে তিন হাজার ১১৩, সিলেটে দুই হাজার ২৬৬ এবং দিনাজপুর বোর্ডে আট হাজার ৮৯৯ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষার ফল এবার তুলনামূলকভাবে খারাপ হয়েছে। পাসের হার ৮৮.২২ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯০.২০ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩.১১ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৩.০১ শতাংশ। ৯৮ হাজার ৫৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮১ হাজার ৯২৮ জন।
বিদেশ কেন্দ্রে পাসের হার ৮৯.৩৭ শতাংশ। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ তত্ত্বীয় এবং ৯ থেকে ১৪ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। মোট ২৮ হাজার ১৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবার মাধ্যমিকে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার ৭৩৪টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পাস করেছে সবাই। গত বছর শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল পাঁচ হাজার ৯৫টি। ১২ থেকে ১৮ মে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল দিয়ে ফল যাচাইয়ের আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে আরএসসি (জঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে ফি দিতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে আবেদন ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে মেসেজে গিয়ে আরএসসি (জঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে ইয়েস (ণঊঝ) লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে নিজ মোবাইল ফোন নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। যেসব বিষয়ে দুটি পত্র (বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে সেসব বিষয়ে একটি বিষয় কোডের (বাংলার জন্য ১০১, ইংরেজির জন্য ১০৭) বিপরীতে দুটি পত্রের জন্য আবেদন হিসেবে গণ্য হবে এবং আবেদন ফি হিসেবে ২৫০ টাকা লাগবে। একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।