মাশরাফিকে পেল কলাবাগান

লটারিভিত্তিক দলবদল প্রক্রিয়া ফিরতেই যেন এক বিন্দুতে মিলে গেলেন সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা। কারণ প্রথমবার ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েস’ পদ্ধতির দলবদলে যে দলে ঠাঁই হয়েছিল ওয়ানডের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের, সেই একই ঠিকানা এবার সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ অধিনায়কেরও। সাকিবের পর এবার মাশরাফিও ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের। ক্রিকেটারদের নিজেদের পছন্দের দল বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা না থাকায় যেকোনো দলে খেলার প্রস্তুতিই নিয়ে রাখতে হয়। যেমনটি ২০১৩ সালে নিয়ে রেখেছিলেন সাকিবও। সেবার অন্য ধারার দলবদলের সময় দেশের বাইরেই ছিলেন তিনি। ফিরে বলেছিলেন, ‘আমারও মনে হচ্ছিল এমন একটা দলে হয়তো আমাকে খেলতে হবে, যে দলে খেলার কথা আমি চিন্তাও করিনি।’ এবার তাঁর মতো যেকোনো দলে খেলার প্রস্তুতি নিশ্চয়ই নিয়ে রেখেছিলেন পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভারতের কাশ্মীরে অবস্থান করা মাশরাফিও।
Read More News

দুজনের দল ঠিক হওয়ার ধরনেও খুব একটা পার্থক্য ছিল না বললেই চলে। ২০১৩-র ২৫ আগস্ট হওয়া আগেরবারের ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েস’-এ সাকিবকে নিয়েও তেমন একটা আগ্রহ ছিল না দলগুলোর। সেবারও ‘আইকন’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা সবাই দল পেয়ে যাওয়ার পর একমাত্র অবশিষ্ট সাকিবকে দলে ভিড়িয়েছিল কলাবাগান। এবার একই ক্যাটাগরির সাতজনের অন্যতম মাশরাফির ক্ষেত্রেও ঘটনা একই রকম। লটারিতে ১ থেকে ১২ পর্যন্ত সিরিয়াল পাওয়া ক্লাবগুলোর জন্য একই সঙ্গে ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির ছয় জন থেকেও খেলোয়াড় বাছার সুযোগ ছিল। প্রথম ডাকার সুযোগ পাওয়া ১০টি দলের মধ্যে কয়েকটি তাই ‘আইকন’ না নিয়ে খেলোয়াড় তুলে নেয় ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরি থেকেও। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো দল না পাওয়া মাশরাফিকে অবশেষে ডেকে নেয় ১২ দলের মধ্যে ১১ নম্বর সিরিয়ালে থাকা কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে হওয়া অনুষ্ঠানে আগেরবারের ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েস’-এর সঙ্গে আরো কিছু মিলও থাকল।

যেমন ২০১৩-র দলবদলেও লটারিতে ক্রিকেটার বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগটি পেয়েছিল শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। প্রথম সুযোগেই তারা লুফে নিয়েছিল মুশফিকুর রহিমকে। যিনি ২০১১ মৌসুমে শেখ জামালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে এক হাজারের বেশি রান করেছিলেন। এবারও লটারিতে ‘আইকন’ ক্রিকেটার ডাকার প্রথম সুযোগটি তাদের। সেই সুযোগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের জন্য মাহমুদ উল্লাহকে আর অবশিষ্ট রাখেনি তারা। সবশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিজের নেতৃত্বগুণ দিয়েও নজরকাড়া এ ক্রিকেটার গত মৌসুমে প্রাইম ব্যাংকের শিরোপা জয়েও সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ওপর তাঁর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা যোগ হওয়া রীতিমতো ‘হটকেক’ মাহমুদ উল্লাহকে শেখ জামাল নিয়ে নেওয়ায় লটারিতে দুই নম্বর সিরিয়ালে থাকা প্রাইম ব্যাংককে অন্য বিকল্প খুঁজতে হয়েছে।

তারা নিয়েছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে অপরিহার্য হয়ে ওঠা নাম সাব্বির রহমানকে। তবে তিন নম্বর সিরিয়ালে থাকা প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব কোনো ‘আইকন’-এর দিকে হাত বাড়ায়নি। গতবারের রানার্স-আপরা বেছে নেয় জাতীয় দলের একাদশ ভাবনায় গত বেশ কিছুদিন ধরেই উপেক্ষিত ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির নাসির হোসেনকে। চার নম্বর সিরিয়ালে থাকা আবাহনী বহুদিন পর আবার বুঝে নেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাঁহাতি তামিম ইকবালকে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে আবাহনীতে খেলা এ বিস্ফোরক ওপেনার ফিরলেন প্রায় সাত বছর পর।

এর পরপরই এই দলবদলে প্রথমবারের মতো নজর কাড়তে সক্ষম হয় মোহামেডান। একেবারে সাধারণ মানের দল সাজাতে থাকা দলটি মুশফিকুর রহিমকে বেছে নিতেই মনে হতে থাকে যে ভালো কিছু করার লক্ষ্য আছে তাঁদেরও। মোহামেডানের পর লটারির সিরিয়ালে ছয় নম্বরে থাকা ভিক্টোরিয়া ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরি থেকে বেছে নেয় মমিনুল হককে। সাত ও আট নম্বরের লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এবং প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সও ভরসা খুঁজে পায় একই ক্যাটাগরিতে। গত মৌসুমে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেই ২০১৫-র বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পাওয়া সৌম্য সরকারের নতুন ঠিকানা তাই হয়ে যায় রূপগঞ্জ। আর আপাতত জাতীয় দলের বাইরে থাকা এনামুল হক (বিজয়) ঢুকে পড়েন গাজী ক্রিকেটার্সে। নিজেদের পালায় কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমী ও ক্রিকেট কোচিং স্কুল (সিসিএস) কোনো ক্যাটাগরি থেকেই কাউকে না নেওয়ার পর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র নেয় মাশরাফিকে। শেষ দল ব্রাদার্স ইউনিয়ন ইমরুল কায়েসকে নেওয়ার পরও দল না পাওয়া তিনজন তবু থেকে যান।

এঁদের মধ্যে আইপিএলে যাওয়া সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমানের দল না পাওয়াটা আগেই অনুমান করা যাচ্ছিল। তবু দ্বিতীয় দফার ডাকে এঁরা দুজন আবাহনী ও মোহামেডানে ভাগাভাগি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন। লিগের শেষ দিকে সাকিবকে পাওয়ার আশা আবাহনী কর্মকর্তা জালাল ইউনুসের, ‘সুপার লিগের শেষ পর্যায়ে হয়তো আমরা সাকিবকে পাব। তখন লিগের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ওকে খুব কাজেও লাগবে।’ মোহামেডানের ক্রিকেট সম্পাদক মাসুদুজ্জামানও বোলিংয়ের নতুন বিস্ময়কে নেওয়ার পেছনে ওই সময়টিই টার্গেট করেছেন, ‘লিগের শেষ দিকে কয়েকটি ম্যাচের জন্য মুস্তাফিজকে পেলে খুবই ভালো হবে আমাদের জন্য।’ দ্বিতীয় দফার ডাকে ওই দুজনের মতো দল মিলেছে মোহাম্মদ মিঠুনেরও। তাঁকে নিয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *