অর্থ ফেরত আনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৪৬ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। এ অর্থ এখন ফেরত আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। কবে ফেরত আসবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ইনকোয়ারারের প্রতিবেদন অনুসারে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইনি জটিলতা পার করে টাকা ফেরত আনা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ইনকোয়ারারের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনের বেড়াজালে পড়েছে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি হয়ে ফিলিপাইনের ওই ব্যাংকে গেছে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ওই অর্থ তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তারা ওই অর্থ লেনদেন করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনই মানেনি। ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকটি এখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ওই ব্যাংকের বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসি বা আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সংস্থার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ফলে তারাও সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক থেকে ওই ঘটনার একটি তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ দিকে এসব ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা।

 
Read More News

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনের আরসিবিসির চারটি হিসাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পর্যায়ের আইনের তোয়াক্কা করেনি ব্যাংকটি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম থেকে পেমেন্ট অর্ডার সুইফটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম অব নিউ ইয়র্কের মাধ্যমে যায় ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাংকে। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা আগে থেকেই এর জন্য প্রস্তুত ছিল। গত বছরের ১৫ মে আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখায় সন্দেহভাজন চার ব্যক্তির নামে হিসাব খোলা হয়। ওই হিসাব খোলার সময় ‘গ্রাহককে জানো’ বা নো ইউর কাস্টমার (কেওয়াইসি) যথার্থভাবে করা হয়নি। কেওয়াইসি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ না করে আন্তর্জাতিক ও দেশী সব ধরনের মানিলন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন করা হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি ওই শাখায় উইলিয়াম গো ও জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস এই দু’জনের নামে দু’টি হিসাব খোলা হয়। পরে ওই দুই ব্যক্তি ফিলিপাইনের সিনেট কমিটির শুনানিতে দাবি করেছেনÑ তাদের স্বাক্ষর নকল করে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কেওয়াইসি ফর্মে গ্রাহকের প্রতিবার, দৈনিক, মাসিক ও বার্ষিক লেনদেনের সীমা উল্লেখ থাকতে হয়। ওই হিসাবগুলোতে তা করা হয়নি। এটি মানিলন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন। হিসাবগুলো ৫০০ ডলার নগদ দিয়ে খোলা হয়েছিল। কিন্তু ওইসব হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি টাকা অর্থ ছাড়া আগে অন্য কোনো লেনদেন হয়নি।
৫ ফেব্রুয়ারি উইলিয়াম গোর হিসাবে ২ কোটি ২৭ লাখ ডলার পাঠানো হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। ওই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া এবং তা উত্তোলন করার জন্য শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোষ দেগুইতো বসে ছিলেন। পরে নিজ গাড়িতে তিনি টাকা নিয়ে যান। ৯ ফেব্রুয়ারি গোর হিসাবে আরো ৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা জমা করা হয়। তার আগেই ৮ ফেব্রুয়ারি ওই টাকা পরিশোধ না করতে ফেড ও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা পাঠায়। কিন্তু নির্দেশনা পাওয়ার পরও গোর হিসাব থেকে সব টাকা উত্তোলন করা হয়।
ওই হিসাবগুলোতে বাংলাদেশ রিজার্ভের অর্থ যাওয়ার আগে কোনো লেনদেন হয়নি। হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হওয়া এবং উত্তোলনের ঘটনা ঘটলেও তাতে নিশ্চুপ ছিল আরসিবিসি। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে কোনো অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছে মনে হলেই তা মানিলন্ডারিং কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। যাকে এসটিআর বলে। কিন্তু আরসিবিসির ওই শাখা এন্টি মানিলন্ডারিং (এএমএলসি) কর্তৃপক্ষকে কিছু জানায়নি। ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো তেতাংকোর কাছে বিষয়টি জানান। এরপর বিষয়টি জানতে পারে এএমএলসি।
দুষ্কৃতকারী স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ চুরি করেছে। পরে সেই অর্থ অন্য দেশে পাচার করেছে। বিশ্বব্যাপী মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকর থাকলেও ফিলিপাইনের আরসিবিসি কোনো পর্যায়েই সেই আইন মানেনি। পাচারকারীদের সুবিধামতো সব অর্থ লেনদেন করেছে।
অবশ্য ঘটনার পর ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটি ও এএমএলসি মানিলন্ডারিং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করেছে। আরসিবিসির মালিক বিশ্বব্যাংক মানিলন্ডারিং আইনে ঘটনার তদন্ত করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *