‘আমায় যদি এই আন্দোলনে হত্যা করা হয় তাইলে কেউ আমার জন্য হায় হায় করবি না; কান্নাকাটি, লাশ নিয়া মিছিল করবি না।…যদি পারিস তাইলে দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু জামাত-শিবিরের রক্ত দিয়া আমার শেষ গোসল করাইস। নতুবা এই সব আন্দোলন-ফান্দোলন রাইক্কা ঘরে বইসা মুড়ি চাবাইস।…জামাত-শিবির বাঁইচ্চা থাকলে এই দেশ বাঁচবে না। তাই হুঁশিয়ার! সাবধান!!!’ ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নাজিমুদ্দিন সামাদ তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে ঘনিষ্ঠজনদের উদ্দেশে এ পোস্টটি দেন। গত বুধবার রাতে রাজধানীর সূত্রাপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র এই নাজিমকে। নাজিমুদ্দিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের ব্যাপারেও বেশ আক্রমণাত্মক পোস্ট দিয়েছেন। ব্লগে লেখালেখি না করলেও ফেসবুকে সরব ছিলেন নাজিম। সরেজমিনে অনুসন্ধান ও তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চার-পাঁচজন যুবক নাজিমকে অনুসরণ করে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নাজিমের মাথায় তিনটি কোপ দেয় এবং একটি গুলি করে।
Read More News
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আগের ব্লগার ও লেখক হত্যার বেশ মিল রয়েছে। তবে এবারের খুনিরা বেশি দক্ষ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। নাজিম গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে সক্রিয় থাকার কারণে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে নিজেই শঙ্কা প্রকাশ করে গেছেন। তিনি সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাও ছিলেন। তবে তাঁর লেখালেখিতে সরকারি দলেরও সমালোচনা আছে। পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ কে বলেছেন, আলামতে মিল মনে হলেও ব্লগারদের হত্যার সঙ্গে এ ঘটনার বেশ কিছু অমিল আছে। এ খুনে অংশগ্রহণকারীরা নিখুঁতভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। ঘটনার সময় নাজিমের সঙ্গে তাঁর বন্ধু ও সহপাঠী সোহেল ছিলেন, তবে তাঁর ওপর আক্রমণ করা হয়নি। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) অথবা জামায়াত-শিবিরের উগ্রপন্থী কোনো গ্রুপ নাজিমকে হত্যা করেছে। নাজিমের স্বজনরা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সূত্রাপুর থানায় বেনামি আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, ‘নিহত নাজিমুদ্দিন সামাদ ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর লেখালেখি করতেন কি না তা দেখা প্রয়োজন।’ সব বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে নাজিম হত্যার প্রতিবাদে গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনভর ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আশপাশের সড়ক অবরুদ্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যায়ের আশপাশের সড়কগুলোতে প্রায় চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে খুনিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন বিক্ষোভকারীরা। আগামী শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার না করা হলে রবিবার থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা।
নাজিম হত্যার প্রতিবাদে বিকেলে শাহবাগে বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে গণজাগণ মঞ্চের কর্মীরা। সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারা দেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই নিজামুদ্দিন সামাদের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। শুধু সামাদই নন, খুন হয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার যাজক। প্রতিটি খুনের পর বলা হচ্ছে, অপরাধীরা আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে পালিয়ে গেছে। একটা সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে দেখিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগানের কথা তুলে দুটি পক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপে ব্যস্ত থাকছে। অপরাধীদের আর বিচার হচ্ছে না।’ সিলেটেও বিক্ষোভ করেছে সেখানকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নূরুল ইসলাম বিডিনিউজ কে বলেন, ‘এখনো আমরা নাজিম হত্যার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না।
তার স্বজন বা সহপাঠীরাও কিছু জানে না। তবে বিষয়টি পরিষ্কার যে তাকে অনুসরণ করে এবং অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিশোধমূলক আক্রমণ মনে হচ্ছে। আগের ব্লগার হত্যার সঙ্গে মিল আছে কি না বা একই চক্রের কাজ কি না, সেগুলোও তদন্তে দেখা হবে।’ ধর্মান্ধতার সঙ্গে সরকারের ভুলেরও কড়া সমালোচক নাজিম : স্বজনরা জানায়, নিহত নাজিমুদ্দিন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের বড়াউট গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নাজিম ছিলেন পঞ্চম (ভাইদের মধ্যে চতুর্থ)। তাঁর মায়ের নাম তয়রুন নেছা। কয়েক বছর আগে তাঁরা সিলেট নগরীর জালালাবাদ আম্বরখানার আবাসিক এলাকার ৯/১ বাসায় ওঠেন। সেখানে থেকেই সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন নাজিম। এর আগে তিনি পাইলট স্কুল ও স্কলার্সহোম স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।
তিন মাস আগে তিনি ঢাকায় এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে সান্ধ্য ব্যাচে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার পর তিনি পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের ২৯/ঘ নম্বর বাড়িতে মেসে ওঠেন। সেখানে তাঁরা ছয়জন থাকতেন, যাঁর মধ্যে ছিলেন সহপাঠী ও বন্ধু সোহেল। বুধবার রাতে নাজিম খুন হওয়ার আগে সোহেল তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। সোহেলের বাড়ি সুনামগঞ্জে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে নাজিম সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সিলেট জেলার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ফেসবুকে ছিলেন সক্রিয়। ধর্মীয় বিষয় ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে এবং উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লিখেছেন তিনি। সরকারি দলের একটি অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বে থাকলেও তিনি যৌক্তিক বিষয়ে ফেসবুকে সরকারি দলের সমালোচনা করতেন।
তবে সব বিষয়ে তাঁর লেখার ভাষা অনেকটা ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল বলে দেখা যায়। নাজিমুদ্দিন সামাদ নামে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ পোস্টটি ছিল গত মঙ্গলবার। ওই দিন রাত ৯টা ১০ মিনিটে তিনি লিখেছেন— ‘সরকার, এবার একটু নড়েচড়ে বসো বাবা। দেশের যা অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার যা অবনতি তাতে গদিতে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। জনরোষ বলে একটা কথা আছে। এটার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে না চাইলে এক্ষুনি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। নতুবা দিন ফুরিয়ে আসবে খুব দ্রুত।’ যেভাবে হত্যা : বুধবার রাতে নাজিমের লাশ উদ্ধারের পর সূত্রাপুর থানায় এসআই নূরুল ইসলাম সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলেন নাজিম। তখন রাত সাড়ে ৮টা। সূত্রাপুরের ঋষিকেশ লেন (একরামপুর) মোড়ে সুবর্ণা টেইলার্সের সামনে চার-পাঁচজন লোক নাজিমকে আক্রমণ করে।
প্রথমে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় এবং পরে গুলি করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাজিমের কপালের ডান পাশ থেকে মাথার পেছনে বড় কাটা জখম তৈরি হয়। মগজ বের হয়ে যায়। ডান কানের ওপরেও কাটা জখম আছে। গতকাল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নাজিমের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নাজিমের মাথা ছাড়া শরীরের আর কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। মর্গ সূত্র জানিয়েছে, নাজিমের ওপর আক্রমণ করা হয় এক পাশ থেকে। প্রথমে মাথার ডান পাশে একই স্থানে তিনটি কোপ দেওয়া হয়। পরে নাজিম হয়তো লুটিয়ে পড়েন। তখন তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাঁ কানের ওপর একটি গুলি করা হয়। গুলিটি ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্রের। তবে সেই বুলেট আগেই বের হয়ে গেছে। সূত্রাপুর থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা এক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নাজিমকে হত্যা করেছে চার যুবক, যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একরামপুর মোড়ে তিন রাস্তার সংযোগস্থল। একটি রাস্তা পশ্চিম দিকে অর্থাৎ লক্ষ্মীবাজারের দিকে, একটি উত্তর দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণে সূত্রাপুর থানার দিকে গেছে। ওই মোড়ে সুবর্ণা টেইলার্সের সামনে রাস্তার দক্ষিণ পাশে ড্রেনের কাছেই হত্যা করা হয় নাজিমকে। সুবর্ণা টেইলার্সে ওঠার তিনটি সিঁড়িতেই রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে।
এ ছাড়া দোকানের কলাপসিবল গেট ও থাই গ্লাসেও রক্ত ছিটকে পড়ার দাগ রয়েছে। সুবর্ণা টেইলার্সের মাস্টার শ্যামল ঘোষ বলেন, তিনি তখন কাপড় কাটার কাজ করছিলেন। হঠাৎ মনে হলো পশ্চিম দিক থেকে দৌড়ে এসে কী জানি একটা ধপাস করে পড়ল। তাকাতেই দেখেন চার-পাঁচজন যুবক এক যুবককে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। একজনের হাতে চাপাতি। বাকিদের হাতে কী ছিল জানাতে পারেননি তিনি। এর পরই গুলির শব্দ পেয়ে দ্রুত তাঁরা দোকানের গেট বন্ধ করে দেন। ঠিক এক মিনিটের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে চলে যায়। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘একজনের হাতে চাপাতি এবং একজনের হাতে পিস্তল ছিল। বাকি দুজন নিহত যুবকের হাত ধরে ছিল। কুপিয়ে ও গুলি করে ফেলে রাখায় ঘটনাস্থলেই যুবকের মৃত্যু হয়। হামলাকারীদের চেহারা দেখিনি।’ গতকাল রাত পর্যন্ত সোহেলের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তাঁদের আরেক সহপাঠী বলেন, সোহেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পর নিরাপদে আছেন। সোহেল তাঁকে বলেছেন, “খুনিরা মোটরসাইকেলে আসে। একটু দূরে মোটরসাইকেল রেখে নাজিমকে ধরে। চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে।
এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেয়। প্রাণ বাঁচাতে সোহেল দৌড়ায়। খুনিরা দূরে গিয়ে মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।” সন্দেহে জঙ্গি ও জামায়াত : নাজিম হত্যার পেছনে উগ্রবাদী একটি চক্র আছে বলে ধারণা করছেন তাঁর সহপাঠী ও সহকর্মীরা। তবে নিহতের স্বজনরা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে দাবি করছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত নাজিমের ভাতিজা জাহেদুল হক সুমন ও চাচাতো ভাই শামীম আহমেদকে পাওয়া গেছে। তাঁরা বলেন, ফেসবুকে বা অন্য কোনো মাধ্যমে নাজিমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁরা কখনোই শোনেননি। সুমন দাবি করেন, চার বছর ধরে তিনি সিলেটে তাঁর সঙ্গে থেকে লেখাপড়া করেছেন। কখনো প্রাণ সংশয়ের কথা শোনেননি। তাঁর পরিবার ধর্মকর্ম পালন করে। তবে গত ৩১ মার্চ সিলেটের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ফেসবুকে নাজিমকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন, ‘তোমার জন্য ভয় হয় নাজিম। একটু সাবধানে থেকো। দেখতেই পাচ্ছ কী হচ্ছে। সাবধানে থেকো।’ এমন আশঙ্কা হয়তো নাজিমের মনেও ছিল। শিক্ষকের কথার জবাবে তিনি লেখেন, ‘ভয় আমার নিজেরও হয় স্যার। অকালে মরে যাওয়ার ভয়। কিন্তু কী করব স্যার? মাথা নত করে চুপ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এ মরাটাই বোধ হয় ভালো।’
সহকর্মীরা জানান, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের সময় নূর হোসেন যেমন বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক/গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখেছিলেন, তাঁর অনুকরণে সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম দিকের কর্মসূচিতে নাজিম বুকে ‘রাজাকার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে মিছিলে যোগ দেন। জগন্নাথ বিশ্বববিদ্যালয়ে নাজিমের সহপাঠী আমির উদ্দিন ও তুহিন বিডিনিউজ কে বলেন, ‘আমাদের পরিচয় বেশি দিন নয়। ওর সঙ্গে কথা বলে আমাদের উগ্রপন্থী বা নাস্তিক মনে হয়নি। কখনো কিছু বুঝতেই পারিনি। মারা যাওয়ার পর এসব শুনছি।’ সিলেটে নাজিমের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মী গত রাতে বিডিনিউজ কে বলেন, ‘নাজিম বেশি বলেছে জামায়াত ও হেফাজতকে নিয়ে। এদের আক্রমণ করে পোস্ট দিত। তার জেরে হত্যা কি না, তা-ও মনে হচ্ছে আমাদের।’ ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ছায়াতদন্ত করছি। নাজিম ধর্মান্ধতার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরকেও আক্রমণ করেছে। এখন এবিটি ও জেএমবি চাপে আছে। তারা সংগঠিত হয়ে এভাবে খুন করবে বলে সন্দেহ হচ্ছে।
এ ছাড়া এবিটি ব্লগারদের হত্যায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। শুদ্ধস্বরে হামলাকারী ও দীপনকে হত্যাকারী চক্রটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। সেই চক্রের কাজ কি না, তা-ও দেখতে হবে।’ ওয়ারী বিভাগের ডিসি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে সিলেট থেকেই। সেখান থেকেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতাও থাকতে পারে, আবার ফেসবুকে লেখালেখি—দুটি কারণই থাকতে পারে।’ গতকাল জবি প্রক্টর ড. নুর মোহাম্মদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাজিমউদ্দিন হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসিকে চিঠি দিয়ে একই অনুরোধ করেছেন। স্বজনরা জানায়, গতকাল বিকেলে নাজিমের চাচাতো ভাই বদরুল হক লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন। এরপর রাতে লাশ সিলেটে নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার দাফন করার কথা রয়েছে।