কোহলি ম্যাজিক নাকি গেইল ঝড়

ভারতের সংবাদপত্র, টিভি থেকে শুরু করে প্রতিটি নাগরিকেরই আজকের দিনটির অপেক্ষা। কলকাতায় কয়েকদিন ধরেই চলছে নির্বাচনী হাওয়া। গতকাল দেখা গেল সেটাও গায়েব। ছোট-বড় সবার মুখেই আজকের সেমিফাইনাল ও বিরাট কোহলির কথা। বাংলাদেশের সঙ্গে হারতে হারতে শেষ তিন বলে অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিল ভারত। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সেখান থেকে বিরাটের ব্যাটিংয়ে সেমিফাইনালে ধোনির দল। তাই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ভারত যেন বিরাট বন্দনাতে ব্যস্ত। সবার বিশ্বাস বিরাটের ব্যাটে চড়েই তৃতীয়বার টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৭ সালে প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দেশটি। এরপর কেটে গেছে ৯টি বছর। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ফাইনালে উঠেও শ্রীলঙ্কার কাছে হারতে হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বার ক্রিকেটের এই ছোট ফরমেটে চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া দলটি। অন্যদিকে ২০১২ সালে লঙ্কা জয় করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ক্যারিবীয়রা। এবার ভারতে বিরাটের বিপরীতে গেইলের দানবীয় রূপটাও ভেঙে দিতে পারে তাদের স্বপ্ন। কিন্তু সব প্রতিকূলতা দূর করে আজ মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে রচনা করতে চায় আরেকটি বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্ন।
২০০৭ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। কিন্তু এবার দেশের মাঠে পাকিস্তানকে আগেই বিদায় করেছে ধোনি বাহিনী। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বড় একটি ধাক্কা খায় ভারত। কিন্তু এরপরই বিরাট কোহলি যেন ভারতের ভার কাঁধে তুলে নেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে একাই ম্যাচ জেতান এই যুগের শচীনখ্যাত বিরাট। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ হতে বসেছিল ভারতের স্বপ্ন। টাইগারদের জয়ের জন্য শেষ তিন বলে যখন দুই রান দরকার। তখনই বদলে গেল সব চিত্র। অধিনায়ক ধোনি ঢেলে দিলেন তার জীবনের সব অভিজ্ঞতা। সেই সঙ্গে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর অসহায় আত্মসমর্পণ। এই ম্যাচ জিতে ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্ন হালে পানি পায়। শেষ বাধা ছিল অজিরা। সেখানেও বিরাট হয়ে ওঠেন ভারতের নায়ক। অধিনায়ক ধোনিকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে ভারতকে সেমিফাইনাল খেলার টিকিট এনে দেন। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন জয় দিয়েই শুরু করে ক্যারিবীয়রা। একে একে তিনটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলেও শেষ ম্যাচে পঁচা শামুকে পা কাটতে হয়। হারতে হয় আইসিসি’র সহযোগী দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আফগানদের বিপক্ষে হারের ধাক্কা সামলে ভারতকে হারানো কতটা সহজ হবে তাই দেখার বিষয়। যদিও সেই ম্যাচে আফগানদের জয়ের উল্লাসে ক্রিস গেইল সামিল হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন এসব কিছুতে কোনো টেনশন নেই ক্যারিবীয়দের। নতুন দিন শুরু হবে নতুন করেই।
তবে পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিধর ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে আজ ওয়েংখেড়েতে চাপেও পাড়তে হতে পারে। কারণ ২২ গজের উইকেটে যে সবুজ ঘাসের চাদর। সেখানে ক্যারিবীয় পেসাররা তাণ্ডব চালাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর ভারতের এমনতিতেই দুর্বলতা রয়েছে পেস খেলার। তাই বিরাট, রোহিত, আশিষ নেহরা, শিখর ধাওয়ানদের বড় চ্যালেঞ্জই অতিক্রম করতে হবে। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা ভারতের আশিষ নেহরার নেতৃত্বে পেস অক্রমণটাও যে মারাত্মক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সঙ্গে দলে নতুন চমক বুমরাতো আছেনই। যদিও ভারতীয় দলে পরিবর্তন এসেছে। ভারতের সেমিফাইনাল পর্যন্ত আসার পথে অভিজ্ঞ যুবরাজ সিংহের অবদানও কম নয়। কিন্তু চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে তার পরিবর্তে খেলতে যাচ্ছেন মনীশ পাণ্ডে। মূলত আজ বিরাট ম্যাজিক ও গেইল ঝড়ের জন্য ম্যাচে আরও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো আইপিএলে কোহলি-গেইল দুজনই খেলেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে। দুই সতীর্থের লড়াইটা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। এই বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্সে আইসিসি’র র‌্যাঙ্কিংয়ে টি-টোয়েন্টির সেরা ব্যাটসম্যান এখন বিরাট। তবে ভারতের পত্রিকা আনন্দবাজারে শিরোনাম হয়েছে বিরাট নির্ভরতাই সেমিফাইনালে ডোবাতে পারে ভারতকে। কারণ বিশ্বকাপে দলের বাকিদের অবদান এখন পর্যন্ত সামান্যই। এ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছে চারবার। এর মধ্যে জয়-পরাজয়ের পাল্লাটা সমান সমান। বিশ্বকাপেই তিনবার দেখা হয়েছে দুই দলের। আর এখানেই এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। ২০০৯ সালে প্রথম দেখাতে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ২০১০ সালেও ১৪ রানে হারে ভারত। তবে বিশ্বকাপে শেষ দেখাতে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত ক্যারিবীয়দের হারায়। তাই গেইলদের জন্য এবার প্রতিশোধের মিশনও।
Read More News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *