ওয়াশিংটন-হাভানার সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিউবা সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কয়েক দফা বৈঠকের পর এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে এখনো এমন কয়েকটি বিষয় রয়ে গেছে, সম্পর্ক জোরদার করতে হলে সেসবের বিষয়ে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে।
নিষেধাজ্ঞা: কিউবা ১৯৫৯ সালে দেশটির বিপ্লবের পর সে দেশে থাকা মার্কিন সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রও কিউবার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে সব সময় উত্তেজনা দেখা গেছে। কিউবা বলেছে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। তবে বিষয়টি কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার হাতে নেই। এর জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেসে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিস্তর বিরোধিতা রয়েছে। কংগ্রেস আরও গণতান্ত্রিক কিউবা তৈরির জন্য প্রচেষ্টা দেখতে চায়।
মানবাধিকার: কিউবার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বারবার তাগাদা দিয়ে আসছে। দেশটিতে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের কারাদণ্ড দেওয়া বন্ধ হোক, এটাও প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের। তবে কিউবা বারবারই বলে এসেছে, তারা মানবাধিকারকে অন্যভাবে দেখে। সর্বজনীন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করাই তাদের কাছে মানবাধিকার। এসব নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত হয় বলে তাদের দাবি। যুক্তরাষ্ট্র চায়, কিউবা একদলীয় সরকারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসুক। কিন্তু কিউবা বলে, তাদের কাছে এটি হলো একটি দলের ‘অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র’।
Read More News
কিউবান অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাক্ট: যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৬ সালে কিউবান অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাক্ট নামে একটি আইন তৈরি করে। এর ফলে কিউবার যেকোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত নাগরিকত্ব পান। কিউবা এই আইন নিয়ে বহুবার আপত্তি তুলেছে। তাদের কথা, এটি স্নায়ুযুদ্ধের ফসল। এটি বাতিল করতে হবে। এর ফলে মানব পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে অনেক প্রাণহানি হয়েছে। তাদের কথা, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কিউবার বিপ্লবের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
গুয়ানতানামো বে: গুয়ানতানামো উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি তৈরি নিয়ে দুই দেশের বৈরিতার অবসান হয়নি আজও। ৯/১১-এর পরে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের কারাগার হিসেবে এই ঘাঁটি কুখ্যাতি অর্জন করে। ৪৫ বর্গকিলোমিটারের এই ঘাঁটিটি স্পেনের কাছ থেকে কিউবার স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ইজারা দেয় কিউবা। বার্ষিক ৪ হাজার ৮৫ ডলারে এই ইজারা দেওয়া হয়। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, দেশটির বিপ্লবের পর একটিবারও সেই অর্থ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
ইজারা দেওয়া জায়গাটি অনেকবারই ফেরত চেয়েছে কিউবা। গত বছর কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো গুয়ানতানামো বে-কে ‘অবৈধভাবে দখলকৃত’ এলাকা বলে দাবি করে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে এটি ফেরত দিতে হবে। তবে সেখানে নৌঘাঁটি উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো রা করেনি।
গণমাধ্যম: কিউবার নিকটবর্তী মিয়ামিভিত্তিক রেডিও ও টিভি মার্তির কড়া সমালোচক রাউল কাস্ত্রো। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় চলা এই দুই সংবাদমাধ্যমকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বড় অন্তরায় বলে চিহ্নিত করেছেন রাউল। কিউবা রেডিও মার্তির সংকেত বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু এরপরও মার্তি রেডিও কিউবায় পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, কিউবায় মানুষ মুক্ত গণমাধ্যম পায় না। সে জন্যই তথ্যের অবাধ সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এসব সম্প্রচারমাধ্যমের প্রসার।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ভেনেজুয়েলার সমাজতন্ত্রী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী মনোভাবের কড়া সমালোচনা করে কিউবা। তারা মনে করে, এটি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। আবার যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বলিভিয়ার মতো দক্ষিণ আমেরিকার বামঘেঁষা সরকারের সঙ্গে কিউবার সম্পর্ক তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্তরায়।