ইরাকের বাস্তুহারা শিশুদের জন্য ফুটবল প্রশিক্ষণ

যুদ্ধে ইরাকের বাস্তুহারা বহু শিশু আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
সব হারানো সেই বাচ্চাদের জীবনে কিছুটা আনন্দ এনে দেবার জন্য বিশ্বখ্যাত ফুটবল ক্লাব আর্সেনাল আর উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইরাকে বানিয়েছে দু’টি ফুটবল মাঠ।
অনুশীলনের সময় উল্লাসে মেতে ওঠা শিশুরা কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ভুলে যায় যুদ্ধের যন্ত্রণা।
যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে বাচা একদল মানুষের জীবনের সঙ্গে কোনভাবেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল উন্মাদনা, তাদের যশ আর খ্যাতির বিষয়টি মানানসই নয়। দুটির মধ্যে কোন মিলই নেই।
কিন্তু সম্প্রতি ফুটবল ক্লাব আর্সেনাল আর উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিল্ড্রেন চেষ্টা করছে সেই বাস্তবতা বদলে দিতে।
এই দুই আপাতবিরোধী জগতের মধ্যে একটি মেলবন্ধন স্থাপনের কাজ শুরু করেছে তারা।
Read More News

উত্তর ইরাকের শহর কুর্দিস্তান।
এখানকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া অনেকেরই মা-বাবা, পরিবার-পরিজন যুদ্ধে মারা গেছে।
বিমান থেকে ফেলা বোমা থেকে বাঁচতে, পালানোর সময় পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কেউ কেউ।
এখানে থাকা শিশুদের জন্যই আর্সেনাল দুটি মাঠ বানিয়েছে।
তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আর্সেনালের মেয়েদের দলের ক্যাপ্টেন এবং ইংল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে খেলা অ্যালেক্স স্কট।
ছেলে এবং মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দুটি দল বানানো হয়েছে।

ক্লাবের প্রধান নির্বাহী ইভান গাজিদিস বলছেন, এই ভিন্ন উদ্যোগটি অনেকের জীবন বদলে দিতে পারে।
“আমাদের এই উদ্যোগ বিশ্ববাসীকে খুবই শক্তিশালী একটি বার্তা দেবে। আমাদের মতো মানের একটি ক্লাব এখানে এসে বলছে যে, দেখ কেবল ইউরোপ নয়, বিশ্বের এই প্রান্তের মানুষদের কথাও আমরা ভাবছি”।
ইরাকের বাকি অংশের তুলনায় কুর্দিস্তানের এই এলাকাটি বেশ শান্ত।
যদিও মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরত্বেই ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে সরকারী বাহিনী।
এখানকার একটি শরণার্থী শিবিরেই ছয় হাজারের বেশি বাচ্চা রয়েছে।
যুদ্ধের কারণে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ লাখ ইরাকি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই শিশু।

হাফসা নামে ক্যাম্পের এক কিশোরী বাসিন্দা বলছে কিভাবে তাদের বেদনাদায়ক সময়কে এই ফুটবল মাঠ আনন্দে ভরে দিয়েছে।
“আমরা যখন বাড়ি ছেড়ে আসি, তখন আমাদের বাড়িঘরের ওপর বোমা আর রকেট ছোড়া হচ্ছিল। সেজন্য আমরা খুবই তাড়াহুড়া করে পালিয়ে এসেছি। কাউকে বিদায় জানিয়ে আসতে পারিনি। শুরুতে এখানে এসে খুবই খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন এখানকার স্কুল আর ফুটবল খেলার সুযোগ–দুটোই আমার খুব ভালো লাগছে”।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই, ক্যাম্পের বিভিন্ন দরজায় দেখা যায় রঙ্গিন জার্সি পড়ে বেরিয়ে আসছে নানা বয়সের কিশোর-কিশোরীরা।
মেয়েদের দলটির সঙ্গে অ্যালেক্স আজ এক্সট্রা প্লেয়ার হিসেবে খেলবেন।
সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইরাকের প্রধান ফারাহ সায়েঘ জানাচ্ছেন, ঘরহারা এসব বাচ্চার কাছে অ্যালেক্স ভীষণ জনপ্রিয়।
“ওদের কাছে অ্যালেক্স এক অনুপ্রেরণার নাম। এছাড়া তিনি একজন নারী এবং তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। সেটাও ওদের উৎসাহ দিচ্ছে। আর ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, উনাকে কাছে পেয়ে কি খুশি ওরা! মনে হচ্ছে, বাচ্চারা যুদ্ধের যত ভয়াবহতা দেখেছে, তা ভুলে গেছে”!
আর অ্যালেক্স নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন বাচ্চাদের এমন ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটানো দেখে।
কিন্তু তার আশা একদিন ভালো সময় আসবে। আর এই বাচ্চাদের সবাই খুশীতে আর আনন্দে জীবন কাটাবে-যুদ্ধের উৎকন্ঠায় নয়।
সে একই আশা নিয়েই হয়ত অনুশীলনে নামা বাচ্চারাও উল্লাসে মেতে ওঠে, আর কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ভুলে যায় ক্যাম্পের ছোট ছোট তাঁবুতে নিজেদের প্রায় অনাথ জীবনের যন্ত্রণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *