বাংলা চলচ্চিত্রে নব্বইয়ের দশকের সাড়া জাগানো নায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি। সে সময় অল্প যে কজন নায়িকা একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন দিতি তাদের অন্যতম। মিষ্টি চেহারার অনিন্দ্যসুন্দর দিতি তার চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র দিয়েই দর্শকের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন।
রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাস্পাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিতি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজউন)।
Read More News
প্রাথমিক জীবন
১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতির সম্পৃক্ততা ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু। এরপর দিতি প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথম বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রে আগমন
১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতির আগমন ঘটে। দিতি প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে তার অভিনিত এমন অনেক জনপ্রিয় ছবি আছে যা এখন ও বর্তমান প্রজন্মের দর্শক এর কাছেও জনপ্রিয়।
ছোট পর্দায় আগমন
দিতি ছোট পর্দার কিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন । এ ছাড়া তিনি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন।
উল্লেখযোগ্য সিনেমা
হীরামতি
দুই জীবন
ভাই বন্ধু
উছিলা
লেডি ইন্সপেক্টর
খুনের বদলা
আজকের হাঙ্গামা
স্নেহের প্রতিদান (১৯৯৯)
শেষ উপহার
চরম আঘাত
স্বামী-স্ত্রী
অপরাধী
কালিয়া
কাল সকালে(২০০৫
মেঘের কোলে রোদ(২০০৮)
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)
মুক্তি (২০১৪)
কঠিন প্রতিশোধ (২০১৪)
জোনাকির আলো (২০১৪)
তবুও ভালোবাসি (২০১৩)
পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী (২০১৩)
হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ (২০১১)
মাটির ঠিকানা (২০১১)
নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭)
দূর্জয় (১৯৯৬)
সুইট হার্ট (নির্মানাধীন)
ধূমকেতু (নির্মানাধীন)
ব্যাক্তিগত জীবন
দিতি ইডেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। তিনি প্রথম বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৬ সালে। বর চলচ্চিত্রেরই মানুষ সোহেল চৌধুরী। নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম দিয়ে দিতির সঙ্গে একই সময়ে পা বাড়ান এ জগতে। চলচ্চিত্রে আসার পর প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এফ কবীর চৌধুরী সোহেল চৌধুরীকে ‘পর্বত’ নামের ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। ওই ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন দিতি। দুজনের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। এর পরের বছর ১৯৮৫ সালে আমজাদ হোসেনের ‘হীরামতি’ ছবিতে অভিনয় করেন সোহেল। এই ছবিতেও তার নায়িকা দিতি। এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েই প্রেমে পড়েন দুজন। পরবর্তীতে তারা দুজনে বিবাববন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৭ সালে জন্ম নেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী আর ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয় ছেলে দীপ্ত। তবে সোহেল চৌধুরীর সাথে দিতির সংসার স্থায়ী হয় নি, ভেঙ্গে যায়। পরে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাত দুটার দিকে সোহেল চৌধুরী খুন হন বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে। পরবর্তীতে দিতি তার সর্বাধিক চলচ্চিত্রের জুটি ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করলেও সেই বিয়েও স্থায়ী হয় নি, ডিভোর্সের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে।
মৃত্যু
দিতির ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে মস্তিষ্কে ক্যানসার ধরা পড়ে । তখন চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিন দফা চিকিৎসা শেষে দিতির শরীরে রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ‘পারকিনসন’ রোগ ধরা পরে যা দুরারোগ্য ক্যান্সার নামে পরিচিত। আরোগ্য সম্ভব না জেনে বাধ্য হয়েই তাকে নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন মেয়ে লামিয়া ও ছেলে দীপ্ত চৌধুরী ।