ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করার কয়েকদিন পর কবি নির্মলেন্দু গুণকেও স্বাধীনতা পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এর আগে স্বাধীনতা পদকের জন্যে যখন ১৪ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয় তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মি. গুণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
ওই তালিকায় নিজের নাম না দেখে তিনি লিখেছিলেন: “আমার একদা সহপাঠিনী, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলাম- কিন্তু আজকাল খুবই বিরক্ত বোধ করছি।”
তিনি লিখেছেন, “শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কিছুতেই সেটি আমাকে দিচ্ছেন না। উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় আমার স্থান হচ্ছে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শেখ হাসিনার সহপাঠী ছিলেন নির্মলেন্দু গুণ।
স্বাধীনতা পদক তালিকায় এবছর নিজের নাম না দেখে তিনি আরো লিখেছেন, “আমাকে উপেক্ষা করার বা কবি হিসেবে সামান্য ভাবার সাহস যার হয়, তাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনও রয়েছে।”
“পারলে ভুল সংশোধন করুন। অথবা পরে এক সময় আমাকে এই পদকটি দেয়া যাবে, এই ধারণা চিরতরে পরিত্যাগ করুন।”
সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পর মি. গুণ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমি খুবই খুশি। ফেসবুক যে অনেক শক্তিশালী সেটা আবার প্রমাণিত হয়েছে। আমার এই স্ট্যাটাসটি প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়েছে। তিনি মনে করেছেন আমার এই দাবী ন্যায্য। তাকে ধন্যবাদ।”
এর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তাকে একুশে পদক দিয়েছিলো। কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের কারণে পরে খালেদা জিয়া তার হাতে সেই পদক তুলে দিয়েছিলেন।
কিন্তু আজ ২০শে মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর কবি নির্মলেন্দু গুণের প্রোফাইলে গিয়ে সেই স্ট্যাটাসটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মি. গুণ বলেছেন, “আমার ওই স্ট্যাটাসের নিচে অনেকেই আজেবাজে মন্তব্য করেছেন। সেগুলো সহ্য করা কষ্টকর ছিলো। তাই আমি হয়তো ওই স্ট্যাটাস ডিলিট করে দিয়ে থাকতে পারি।”
তবে আজ দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “বুঝতে পারছি। আমার মতো, ছোটো হতে ভয় না-পাওয়া Confessional ঘরাণার কবি যারা পূর্বে দেখে নি, আমার unpredictable behabiour তাদের কাছে অচেনা ঠেকছে বলেই তারা আমাকে নিন্দামন্দ শুধু নয়, গালমন্দও দিচ্ছে। আমার ক্ষোভকে তারা লোভ বলছে।”
“যদিও আমি একটি কবিতায় বলেছি : আর কিছু তো আরাধ্য নয় কাব্য এবং নারী ছাড়া, ওটা পেলে জাহান্নামেও যেতে আমি এক পা খাড়া।”
মি. গুণ লিখেছেন, “প্রশ্ন উঠেছে, আমি স্বাধীনতা পদকের জন্য নিজে থেকে দাবি তুলেছি কেন? আমি স্বাধীনতা পদক চেয়েছি এই জন্যই যে, আমি চাই এই পদকটি সসম্মানে সচল থাকুক।”
আর গতকাল ১৯শে মার্চ তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন: “আমার একটা ভুল ধারণা ছিলো। আমি জানতাম স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য হচ্ছে নগদ দুই লক্ষ টাকা এবং তিন ভরি স্বর্ণের একটি পদক, যে পদকগাত্রে প্রাপকের নাম স্বর্ণাক্ষরে উৎকীর্ণ থাকবে।”
“আজ জানলাম- স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য দুই লক্ষ টাকা নয়, তিন লক্ষ টাকা। এবং পদক-প্রাপকের নাম-খোদিত স্বর্ণের লকেটের ওজন একই থাকছে। অর্থাৎ তিন ভরি স্বর্ণ।”
আর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেওয়া স্ট্যাটাসের পরপরই তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন: “আমি তিন বছর আগে সুইডেনে গিয়ে ওখানকার একটি আলোচনা-সভায় বলেছিলাম, আপনারা কোনো বেশি বয়স্ক লেখককে নোবেল পুরস্কার দিয়ে তাঁর শেষজীবনের শান্তি, স্বস্তি ও স্বাধীনতা নষ্ট করবেন না। তাঁকে শান্তিতে থাকতে দিন। মনে হচ্ছে, স্বাধীনতা পদক প্রশ্নে স্বদেশেও আমার একই অবস্থানে থাকা উচিত ছিল। এই পদকের জন্য আমি একটু বড়ই বটে।”
“একটা ছোট জিনিসের জন্য আপনাদের বড় কষ্ট দেয়া হলো। সেজন্য আমি দুঃখিত। আশা করি আপনারা আমার কবিত্বের ওপর আস্থা হারাবেন না। আমার কবিতা পড়বেন। আমার কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আপনাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে।”
এবারের স্বাধীনতা পদকের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পাটের জিন নকশা উন্মোচনকারী প্রয়াত বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ ১৪ জন ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নাম ঘোষণা করেছে সরকার।