নীলগিরি দর্শন

নীলগিরিকে বলা হয় বাংলাদেশের দার্জিলিং। তার অন্যতম কারণ পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি খেলা। মেঘের দিন আসছে সামনেই। বর্ষায় নীলগিরির সেই অপূর্ব দৃশ্যের বর্ণনা করছেন

প্রীণন পাখোয়াজ
Read More News

নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলার ‘থানছি’ উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এই পর্বতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত উপজাতি সম্প্রদায় ম্রো পল্লী। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মতো। বর্ষা মওসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোঁয়ার দুর্লভ সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মওসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি- যা সেনা তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনাক্যাম্প। বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বেশির ভাগ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন। বান্দরবান জিপ স্টেশন থেকে জিপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়িও ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোস্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোনো গাড়ি যেতে দেয়া হয় না। এ ছাড়া নিরিবিলিতে সপরিবারে কয়েকটা দিন কাটাতে এটি একটি আদর্শ জায়গা। এর জন্য বান্দরবান সদর সেনা রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। যোগাযোগ করতে হবেÑ পেট্রো এভিয়েশন : ৬৯/২, লেভেল ৪, রোড ৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকাÑ এই ঠিকানায়।
নীলগিরিকে বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসেবে অবহিত করা যায়। যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালি চলে দিনরাত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ওই মেঘের দেশে। তবে যারা মেঘ ভালোবাসেন তারা জুন-জুলাইয়ে অর্থাৎ বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশি মজা পাবেন। কারণ মেঘ তখন আপনা হতে এসে আপনাকে ধরা দিয়ে যাবে। এখানে মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলাঙ্গনা, মারমা হাউজসহ নানা নামে আকর্ষণীয় কটেজ রয়েছে। আছে একটি ক্যাফেটরিয়া। বর্তমানে দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা প্রতিদিনই নীলগিরি ভ্রমণে আসছেন।
নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে ল্যান্ডক্রুজার জিপ ভাড়া করতে হবে। সময় লাগবে আসা-যাওয়ায় ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ভাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত আসা-যাওয়া-ছোট জিপ পাঁচ সিট ২৩০০ টাকা এবং বড় জিপ আট সিট ২৮০০ টাকা। কিন্তু এখানে ড্রাইভাররা আপনার কাছে আরো অনেক বেশি চাইতে পারে, যা কখনো দেবেন না। (নীলগিরি+চিম্বুক+শৈলপ্রপাত+স্বর্ণমন্দির) এই চারটি সাইট দেখতে মাত্র ২৮০০ টাকা এবং দুপুরে লান্স করানোর মাধ্যমে। ইচ্ছে করলে স্থানীয় ড্রাইভার বাদশার সহযোগিতা নিতে পারেন।
গিরি মারমেট : ৭৫০০ টাকা। (৮-১০ জন থাকা যাবে)। মেঘদূত : ৬৫০০ টাকা। (৮-১০ জন থাকা যাবে)।
নীলাঙ্গনা : ৫৫০০ টাকা। (৪-৬ জন থাকা যাবে ২ রুমে)। নীলাঙ্গনায় কাপলের জন্য এক রুম ভাড়া নেয়া যায় ৫৫০০ টাকার অর্ধেকে ২৭৫০টাকায়।
এখানে খাবার ব্রেকফাস্ট+লান্স+ডিনার মিলে খরচ হবে দিনে ৫০০ টাকা জনপ্রতি। এবং এটি অবশ্যই কটেজ বুকিং দেয়ার সাথে খাবার বুকিংও দিতে হবে না হলে কটেজে থাকতে হবে না খেয়েই।
বান্দরবান শহরে খাবার হোটলের মান তেমন ভালো নয়। তবে যে হোটেলে আপনি থাকবেন সেগুলোতে রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া আরো দু’টি মোটামুটি মানের ভালো হোটেল হচ্ছে জেলা সদর বিল্ডিংয়ের কাছে ‘ফিয়েস্তা’ হোটেল এবং বান্দরবান বাজারের কাছে ‘তাজিংডং’ হোটেল। বান্দরবানে সব হোটেলে খাবারের মানের চেয়ে দামটা বেশি। রান্নায় মসলা ব্যবহার ও হলুদের আধিক্য বেশি। হিল জুস, নীলাচল ইত্যাদি বান্দরবানের বিখ্যাত খাবার খেতে ভুলবেন না।
বান্দরবান জেলায় দেখার মতো আরো জায়গা হলোÑ স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মিলনছড়ি, চিম্বুক, সাঙ্গু নদী, তাজিনডং, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝরণা, বগালেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিক লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, নাফাখুম জলপ্রপাত ইত্যাদি। এ ছাড়া বান্দরবানে কয়েকটি ঝিরি রয়েছে। চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানাপাড়া ঝিরি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
এতগুলো জায়গা একসাথে দেখা সম্ভব নয়। তবে বান্দবান শহরে থেকে, আশেপাশের সাতটি এলাকাÑ স্বর্ণমন্দির, নীলগিরি, মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ও চিম্বুক ঘুরে আসতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *