আদমজী ইপিজেডে কর্মসংস্থান বেড়েছে ২৮ গুন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত আদমজী জুট মিলটি ছিল এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল। এশিয়ার বৃহত্তম এ পাটকলটি ২০০২ সালের ৩০ জুন চারদলীয় জোট তথা বিএনপি সরকার ১২শ’ কোটি টাকা লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়। এতে তাৎক্ষনিক প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মিলটি বেপজা কর্তৃপক্ষের কাছে  হস্তান্তর করা হয়। এবং সেখানেই ২০০৬ সালের ৬ই মার্চ আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (আদমজী ইপিজেড) যাত্রা শুরু হয়।
Read More News

জানা যায়, আদমজী জুট মিলের ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমি থেকে ২৪৫ দশমিক ১২ একর জমির মধ্যে ২২৯টি প্লট নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আদমজী ইপিজেড। বাকি প্রায় ৫০ একর জমির মধ্যে রয়েছে একটি বড় পুকুর এবং ২০০ অবাঙ্গালি পরিবারের বসবাস। ২২৯টি প্লটের মধ্যে মাত্র ১টি প্লট খালি আছে যা কিনা বরাদ্ধের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং প্রতিটি প্লটের আয়তন ২০০০ স্কয়ার মিটার। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ এর অধিকও প্লট বরাদ্দ নিয়েছে।

বরাদ্ধকৃত প্লটগুলোর মধ্যে ৪৮ টি কারখানা ইতিমধ্যে উৎপাদনে গেছে এবং আরো ১৭টি যে কোন সময় প্রডাকশনে যাবে। এর মধ্যে দেশী মালিকানাধীন ১৮টি, বিদেশী মালিকানাধীন ৩২টি এবং যৌথ মালিকানাধীন ১৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে নীট গার্মেন্টস, ওভেন গার্মেন্ট, জিপার, প্যাকেজিং, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মুজা, জুয়েলারি, পলি ও ডায়িংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যা ১০০ ভাগ রপ্তানিযোগ্য। হংকং, কানাডা, জাপান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, থ্যাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইউক্রেন, দণি কোরিয়া, কুয়েত, পর্তুগাল, চীন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এই ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথোরিটির (বেপজার) গণসংযোগ বিভাগের মহাব্যাবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর আমাদের সময়কে জানান, ২০০৬ সালে যখন আদমজী ইপিজেড যাত্রা শুরু করে তখন শ্রমিক ছিল মাত্র ১,৬২৫ জন যা ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি এসে দাড়ায় ৪৫,৩১৭ জনে। গত দশ বছরে আদমজী ইপিজেডে কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় ২৮ গুন। এর মধ্যে ২৩১ জন বিদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। মাত্র ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারিতে এসে এর বিনিয়োগ দাড়ায় ৩৪২.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ইপিজেড শুরুর পর প্রথম এক বছর রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ০.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। যা কিনা এ বছর জানুয়ারির ১৬ তারিখ পর্যন্ত এসে দাড়ায় ১৯৯২.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

তিনি আরো জানান, ইপিজেডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষদের ছেলেমেয়েদের উন্নত পড়ালেখার জন্য আদমজী ইপিজেড এলাকায় নির্মান করা হবে বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নির্মাণ করা হবে আধুনিক বেপজা বিল্ডিং।

এছাড়াও ইপিজেড অভ্যন্তরে আধুনিক মানের একটি মেডিকেল সেন্টারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ দিকে। এই মেডিকেল সেন্টারে থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, এম্বুলেন্স সার্ভিস এবং আধুনিক মানের ইসিজি যন্ত্র। ইপিজেডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ এই শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যাক্তিদের কথা চিন্তা করে খুব শিগগিরই নির্মান করা হবে একটি অত্যাধুনিক ক্যাফ্যাটেরিয়া। যা কিনা অনেক দিনের দাবি ছিল এই শিল্পাঞ্চলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শ্রেণীপেশার মানুষের। এছাড়া আদমজী ইপিজেডের এই শিল্পাঞ্চল সহ আশেপাশের সকল শিল্প কারখানার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০ হাজার বর্গমিটার জায়গার  মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে শিল্প পুলিশ-৪ এর ইউনিট। এই শিল্প পুলিশ ইপিজেড অঞ্চলে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যে কোন পরিস্থিতিতে সবার আগে এগিয়ে আসে শিল্প পুলিশ।

আদমজী ইপিজেডের এতসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে কিছু অসুবিধার কথাও জানা গেছে এ অঞ্চলের বেশ কিছু কারখানা কতৃপক্ষ ও বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এঅঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ জ্বালানি সমস্যা নিয়ে। বিদ্যুতের তেমন কোন অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে গ্যাস নিয়ে নানা অভিযোগ। অনেক প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের পরিবর্তে ডিজেল দিয়ে চালানো হচ্ছে বয়লার মেশিন। যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে। গ্যাস থাকলে উৎপাদন ব্যায় খুবই কম হতো। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশের অংশও বেড়ে যেতো। যার প্রভাব আমাদের অর্থনীতির উপরও পরত। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঘোষনা ছাড়াই শ্রমিক ছাটাই বেতন বৃদ্ধি সহ নানা দাবী নিয়ে সৃষ্টি হওয়া শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়াও অভিযোগ আছে ইপিজেডের কাষ্টমস কর্মকর্তাদের নিয়ে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এইপিজেডের একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য আমরা জিম্মি হয়ে আছি। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। বৈধ কাগজ পত্র থাকারপরও তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। অন্যথায় তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো আটকে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বেপজা কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *