অর্থ চুরির মূল হোতা ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিম ওং?

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিম ওং বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্তকারী সিনেট ব্লু রিবন কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটর সের্গেই ওসমেনা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে গত বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দিয়েছেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির শাখার ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতো। ওই শাখার পাঁচটি অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে হ্যাক করার পর স্থানান্তর করা হয়েছিল।

ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ইনকোয়েরার সিনেটর সের্গেই ওসমেনার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটিতে মায়া দেগুইতো একা দায়ী নন। এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত আছেন।
Read More News

ওসমেনার বলেন, যে অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে সেগুলো ব্যবসায়ী ওং-ই দেগুইতোকে খুলতে বলেছিলেন। একই সঙ্গে তাকে লোপাট হওয়া অর্থ ফিলিপাইনি মুদ্রায় রূপান্তরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস ইনকরপোরেশনকে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন ওং। পুরো ঘটনায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য ইতিমধ্যে ওংকে তলবও করেছিল ব্লু রিবন কমিটি। তবে তার আইনজীবী জানিয়েছেন চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ওং দেশের বাইরে রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে ফেরামাত্র তিনি কমিটির সামনে তার বক্তব্য পেশ করবেন।

ব্লু রিবন কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখানে একজন পরিকল্পনাকারী রয়েছেন। এই মুহূর্তে কিম ওংকেই পরিকল্পনাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা তাকে একটি সুযোগ দিতে চাই। বিদেশ থেকে এসে কমিটির সামনে তার বক্তব্য যাচাইয়ের সুযোগ আমরা দিতে চাই। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে তার ভূমিকা অনেক বড়।’

মায়া দেগুইতো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে ওংয়ের অনুরোধ কেন রেখেছিলেন জানতে চাইলে সিনেটর ওসমেনার বলেন, তারা দুজনই পূর্বপরিচিত। দেগুইতোকে ওং পাঁচ ডলারের অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনিই মিডাস হোটেলে সাক্ষাতের সময় দেগুইতোকে অ্যাকাউন্ট খোলার তথ্য ও ব্যাংক হিসাবধারীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। দেগুইতো তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তার কাছে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে জমা রাখার জন্য ২ হাজার ৫০০ ডলার পাঠানো হয়েছিল। পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে চারটিই ৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরে ব্যবহার করা হয়েছিল। বাকি একটি কাজে লাগানো হয়নি।

কে এই কিম ওং : পুরো নাম কাম সিন ওং। তবে তিনি কিম ওং নামেই পরিচিত। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি ফিলিপাইনে এসেছিলেন। কলেজ শেষ করার আগেই তিনি পড়াশোনা বাদ দেন এবং একটি সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। তবে কখন, কীভাবে তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায় না। তার সঙ্গে ফিলিপাইনের অনেক রাজনীতিবিদ ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দহরম-মহরম রয়েছে। এর আগেও সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল ওংকে। ২০০১ সালের ২৩ আগস্ট অবৈধ মাদক ব্যবসায় ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে কমিটির সামনে হাজির হতে হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *