আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোথাও মহাসড়ক অবরোধ ও প্রতীকে আগুন দেয়া হয়েছে। আবার কোথাও নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র হাতে সরকার সমর্থক দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জে দুই ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সারা দেশে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জে চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হামলা-ভাঙচুর : মহাসড়ক অবরোধ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সীমানা জটিলতা নিয়ে রিটের কারণে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করায় ২য় দফায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নবীদুল ইসলামের সমর্থকরা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সৌপ্তিক আহম্মেদ মিঠুর বাসভবনে অবস্থিত হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দুই চেয়ারম্যান সমর্থকের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ইউনিয়নের কড্ডা এলাকায় এ ঘটনা শুরু হয়। সয়দাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সৌপ্তিক আহম্মেদ মিঠু অভিযোগ করে বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনের কারণে ইউনিয়নের একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। পুনরায় ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ না করে নির্বাচন না দেয়ার জন্য গত বছর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছিল। সেই রিটের কারণে বুধবার হাইকোর্ট আসন্ন নির্বাচনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
Read More News
যে কারণে ২য় দফায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নবীদুল ইসলামের সমর্থকরা হামলা চালিয়ে কড্ডা মোড়ে অবস্থিত আমার বহুতল বাসভবনের নিচ তলায় অবস্থিত ই-স্কয়ার হাসপাতালের দরজা, জানালা, চেয়ার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। এ সময় সিরাজুল ইসলাম নামে এক কর্মীকেও মারপিট করা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নবীদুল ইসলাম হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নির্বাচন স্থগিতের কথা শুনে বিক্ষুব্ধ লোকজন সৌপ্তিক আহম্মেদ মিঠুর হাসপাতালে হামলা চালায়। ওই সময় মিঠুর সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারপিটের ঘটনায় তার ৮/১০ জন সমর্থকও আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার জয়নাল আবেদিন জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কপি হাতে পেয়েছি। ৩ মাসের জন্য সয়দাবাদ ইউপি নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১শে মার্চ এ ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং ৪ জন স্বতন্ত্র মিলে ৬ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বতর্মান চেয়ারম্যান সৌপ্তিক আহম্মেদ মিঠু আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেননি।
ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫, ৬ ও ৯ এই ৩টিতে একক প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যেই ৩ জন প্রার্থী মেম্বর হিসাবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম জানান, নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় উভয়পক্ষ মুখোমুখি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এ সময় লোকজন মহাসড়ক অবরোধ ও বাড়িঘর ভাঙচুর করলেও ১০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশি বাধার কারণে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কড্ডা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন।
স্থগিত নির্বাচন, ২ ওসিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় স্থগিত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে তার প্রার্থিতা। স্থগিত করা হয়েছে ২২শে মার্চের নির্বাচন। বিএনপি প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মন্টুর লিখিত অভিযোগের পর তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশন এ নির্দেশ প্রদান করেন। গতকাল সকালে জেলা নির্বাচন অফিস উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ওই ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। এছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে ব্যর্থ হওয়া ও সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে মোরেলগঞ্জ থানার ওসি রাশেদুল আলম, এসআই মাহবুবুর রহমান ও রামপাল থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার দুপুরেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে বাগেরহাট পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান মন্টুর মনোনয়নপত্র ছিনতাই করে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিটলার গোলদারের বিজয়সহ তার প্রার্থিতা বাতিল ও ওই ইউনিয়নে ২২শে মার্চের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মোরেলগঞ্জ ও রামপালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ তদন্ত করে এই তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষ নেয়া ও নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায়ে মোরেলগঞ্জ থানার ওসি রাশেদুল আলম, এসআই মাহবুব ও রামপাল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলামকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বাগেরহাটের ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়নে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিটলার গোলদারের বিজয়সহ তার প্রার্থিতা বাতিল ও ওই ইউনিয়নে ২২শে মার্চের নির্বাচন স্থগিত ও তিন পুলিশ কর্মকর্তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো রুহুল আমিন মল্লিক। তিনি জানান, এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষ নেয়া, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার বিষয়ে ওই প্রার্থীরা স্ব-স্ব থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেন। কিন্তু তারা এসব অভিযোগের গুরুত্ব না দেয়ায় ওই দুই উপজেলার নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিষয়টি মাঠপর্যায়ের তদন্তে প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন মোরেলগঞ্জ ও রামপালের তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে আইজিপিকে নির্দেশ দেয়। বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চাটখিলে দলীয় মনোনয়ন পেলেন যারা
মামুন হোসেন, চাটখিল (নোয়াখালী) থেকে জানান, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৩য় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা ও জাসদ নিজেদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জাহাঙ্গীর দলীয় প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রদান করেন। উপজেলার নৌকার প্রার্থীরা হচ্ছেন ১নং শাহপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার কাজল, ২নং রামনায়ানপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী, ৩নং পরকোট ইউনিয়নে বাহার আলম মুন্সী, ৪নং বদলকোট ইউনিয়নে সোলাইমান শেখ, ৫নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শহীদ উল্যাহ, ৬নং পাঁচগাঁও ইউনিয়নে বজলুর রহমান বাবুল, ৭নং হাট পুকুরিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম বাকী বিল্লাহ্, ৮নং নয়াখলা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, ৯নং খিলপাড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। এছাড়া উপজেলার বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন গতকাল (সোমবার) মানবজমিন প্রতিনিধিকে জানান, ২নং রামনারায়ণপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ভুট্টো, ৪নং বদলকোট ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আবু হানিফ, ৫নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আবু ছায়েদ চৌধুরী, ৬নং পাঁচগাঁও ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন নয়নকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, বাকি ৫টি ইউনিয়নে প্রার্থীর তালিকায় পরবর্তীকালে চূড়ান্ত করা হবে। উপজেলা জাসদের সভাপতি সামছুল হক দুলাল জানান, তারা ৩নং পরকোট ইউনিয়নে শেখ মাঈন উদ্দিন মিজান, ৪নং বদলকোট ইউনিয়নে আমির হোসেন বিএসসি ও ৫নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে শামছুল হক দুলাল মশাল প্রতীক নিয়ে ভোট করবেন। এ ছাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করবেন, ৩নং পরকোট ইউনিয়নের আবুল হাসান কুসুম ও ৮নং নোয়াখলা ইউনিয়নে আবদুল কাইয়ুম।
আশুগঞ্জে নৌকা প্রতীকে আগুন
আশুগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আশুগঞ্জের তারুয়া ইউনিয়নে দুটি নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে টানানো বাঁশ ও কাগজের তৈরি দুটি নৌকা প্রতীক কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার গভীর রাতে। বিষয়টি নির্বাচন অফিস ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ইদ্রিস হাসানের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. বাদল সাদির বা তার সমর্থকগণ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বাদল সাদির এ অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে জানান, তার জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে এ অভিযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে গতকাল সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ইদ্রিস হাসান অভিযোগ করে জানান, বাদল সাদিরের সমর্থনে বুধবার রাতে জনৈক কবিরের বাড়িতে নির্বাচনী সমাবেশ শেষে রাতে মিছিল থেকে ফেরার পথে তিনি বা তার সমর্থকগণ তারুয়া বাজারের কাছে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-লালপুর বাইপাস সড়কের নজরুল মার্কেটে রাস্তার উপর টানানো বাঁশ-বেত-কাগজের তৈরি নৌকা প্রতীকে আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, ঘটনা শুনার পর সরজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ চেষ্টা করছে।
সীতাকুণ্ডে ৪ ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে যখম
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় ৪ ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে যখম করেছে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কুমিরা মাস্টার পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিরা ইউনিয়নের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হেলাল উদ্দিনের ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় নৌকা প্রতীকের ২০/৩০ জন কর্মী অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় নৌকা প্রতীকের কর্মীরা ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ছাত্রদলের ৪ জনকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে। বর্তমানে তারা চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছে। আহতরা হলো- কুমিরা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল চৌধুরী জনি (২৮), দপ্তর সম্পাদক সুমন (৩০), মাস্টার পাড়া ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী (২৭), সহ-সভাপতি মো. রুবেল (২৫)। আহতদের মধ্যে ইউসুফের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হেলাল উদ্দিন জানান, আহত জনিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোরশেদের ছোটভাই আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আবারও হামলা চালিয়ে মারাত্মক যখম করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, কুমিরা ইউনিয়নে ধানের শীষের কর্মীরা পোস্টার বা গণসংযোগ করতে পারছে না সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার কারণে। অপরদিকে পুলিশ অহেতুক ছাত্র ও যুবদলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে। এ বিষয়ে তিনি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে হামলার কথা অস্বীকার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোরশেদ জানান, জনি নামে নাশকতা মামলার এক আসামিকে জনগণ ধরে পুলিশে দিয়েছে।
শরণখোলায় বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে নৌকার সমর্থকদের হামলা
শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের শরণখোলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মতিয়ার রহমান খানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাকির খান মহিউদ্দিনের ২৫-৩০ জন কর্মী রাম দা, হকস্টিক, লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে ঢুকে ঘরের দরজা, জানালায় এলোপাতাড়িভাবে পেটায়। একপর্যায়ে ভিতর থেকে দরজা খুলে দিলে কর্মীবাহিনী ঘরে ঢুকে মতিয়ার খানকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। মতিয়ার রহমান খান জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ১২টি মোটরসাইকেলযোগে ২৫-৩০ জন লোক এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে তার পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িতে ঢুকে তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকা রাম দা, হকস্টিক, লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে তার ঘরের দরজা, জানালা পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের চাপের মুখে মতি খান দরজা খুলে দিলে তারা ঘরে ঢুকে তাকে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় তারা মতি খানকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয়। তিনি হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে ইউএনও এবং ওসিকে জানালে পুলিশ আসার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে তার ওপর এই নিয়ে তিন দফা হামলা করে মহিউদ্দিনের সমর্থকরা। বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীন এবং গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। নৌকার কর্মীরা তাকে মাঠে নামতেও নিষেধ করেছে। তিনি এখন জীবন সংসয়ের মধ্যে রয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো ফল হচ্ছে না বলে অসহায়তা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম মিয়া জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তার আগেই লোকজন চলে যায়। তবে হামলার ঘটনা সঠিক নয়। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কিছু লোক সেখানে মহড়া দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ অতুল মণ্ডল জানান, বিএনপি প্রার্থীর বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিস্থিত এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাউফলে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত ১০
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বাউফলের কাছিপাড়া ইউনিয়নে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সার্জেন্ট হাফিজুর রহমানের (আনারস) গণসংযোগের সময় হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলামের (নৌকা) সমর্থকরা। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান ও তার ছোট ভাই আফজাল হোসেন, শানু মৃধা, বাদল মৃধাসহ আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আফজাল হোসেনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) পাঠানো হয়েছে। একই রাতে অপর এক ঘটনায় কালিশুরী বন্দরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (ঘোড়া) চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রহমানের (রহম আলী) সমর্থক ইয়াকুব তালুকদারের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী (নৌকা) অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিনের সমর্থক মাহতাব মোল্লার নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল। একই সময় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় ধুলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিছুর রহমানের (নৌকা মার্কা) একটি নির্বাচনী অফিস। ধুলিয়া ইউনিয়নে এ হামলায় বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করা হলেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে এলাকায় অবস্থান করছেন না জানিয়ে তা অস্বীকার করেছেন বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জব্বার (ধানের শীষ)। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. জা. মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মঠবাড়িয়ায় দোকানে আগুন, আহত ১৭
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকের দোকান পুড়িয়ে দেয়া ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ভোরে প্রতিপক্ষের আগুনে পুড়ে গেছে তুষখালী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকের দোকান ঘর। এছাড়া দুপুরে ধানীসাফা বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ৮ জন সমর্থককে আহত করা হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার নির্বাচনী সহিংসতায় মঠবাড়িয়ায় কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান হাওলাদার (নৌকা) অভিযোগ করেন, তার সমর্থক ৪নং ওয়ার্ড (ছোট মাছুয়া) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনের মুদি দোকান বৃহস্পতিবার ভোরে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী ছগির হাওলাদারের (ধানের শীষ) সমর্থকরা।
মনিরামপুরে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, বোমা বিস্ফারণ, আহত ২০
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের মনিরামপুরে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, বোমা বিস্ফোরণ, মারপিট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় মনিরামপুর থানায় ৪টি মামলা করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবুল ইসলামের নেংগুড়াহাট বাজারের নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়েছে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরদারের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়ে নির্বাচনী অফিস, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে এবং তাদের অতর্কিত হামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীসহ ১৪-১৫ জন আহত হয়। এসময় হামলাকারীরা ৯-১০টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। আহতদের মধ্যে গুরুত্ব জখম মুনছুর আলীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সাহেব আলীকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানকে প্রধান করে ১৯ জনের নামে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে, একই রাতে মশ্মিমনগর ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুরের ৪টি নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবুল হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় চাপাতলা বাজারে তাণ্ডব চালিয়ে ডা. আব্দুর সাত্তারের চেম্বার, আব্দুল মাজেদ ও ইসহাকের চায়ের দোকান, আনছারের সারের দোকান, মুনছুর মোড়লের ভূষি মালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মোতালেব হোসেনের সাইকেল পার্টসের দোকানসহ ৭-৮টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় অন্তত ৫ জন আহত হয়। এলাকাবাসী জানান, উত্তেজিত কর্মীরা এসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অন্তত ২৫-৩০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর এবং ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে পৃথক ২টি মামলা করেছে।