প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও আদর্শে শিশুরা বেড়ে উঠবে। শিশুরা জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদককে বর্জন করে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের সেবা করবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিশু রাফিয়া-তুর জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিশু ও মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, শিশু ঋতিক জিদান প্রমুখ। শেখ হাসিনা বলেন, আর কোনো শিশুই রাসেলের মতো নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে না। কোনো শিশুই না খেয়ে দিন-রাত কাটাবে না। নিরক্ষর থাকবে না।
Read More News
শিশুরা নিরাপদ ও সুন্দর জীবন পাবে। তাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করুন। বড় হয়ে যেন তারা সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। প্রথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করেন। আমরা ২০১১ সালে শিশুনীতি প্রণয়ন করেছি। শিশুর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও বৈষম্য বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েছি। বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় খেলার সরঞ্জাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছি। শতভাগ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। পড়াশোনার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা করেছি। সৃজনশীলতার বিকাশে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নাট্য প্রতিযোগিতা ও উৎসবের আয়োজন করে চলেছি। শিশুদের জন্য জাতির পিতার জীবন-কর্মভিত্তিক ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছি। পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, ঝরেপড়া শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
কারাগারে আটক শিশুদের সংশোধন ও পুনর্বাসন করার মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মার্চ মাসকে বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এ মাসেই বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ মাসের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। শিশুরা নির্মল স্বচ্ছ ও পবিত্র হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশকে দেখবে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জানবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি ২০২১ ও ২০৪১ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের বর্তমানকে আমরা শিশুদের জন্য উৎসর্গ করি। আসুন মেধা মননে সেরা একটি আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলি। আলোচনা সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শিশু একাডেমি আয়োজিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক চিত্রাঙ্কন ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শিশু ও মহিলাবিষয়ক সচিব, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান। এরপর গোপালগঞ্জ শিশু একাডেমির শিশুশিল্পীরা ‘চির ভাস্মর বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কাব্য নৃত্যগীতি আলেখ্য পরিবেশন করে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও দর্শক এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র আয়োজিত দিনব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন। বিতরণ করেন সেলাই মেশিন।
বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে আসেন। প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ পুরো জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ফাতেহা পাঠ করেন। দোয়া ও মোনাজাত করা হয় বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায়। পরে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রেসিডেন্ট সমাধিসৌধে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশারফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় বঙ্গভবনে ফিরে যান।
এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করলে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধুর মাজার অবমুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর মাজারে মানুষের ঢল নামে। বর্ণিল পতাকা ও তোরণ দিয়ে টুঙ্গিপাড়াকে সাজানো হয়। শিশু সমাবেশের শুরুতে শুভ শুভ শুভ দিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ধ্বনিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়া মুখরিত হয়ে ওঠে। সর্বত্রই বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ। শিশু-কিশোর সমাবেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে শিশুদের পরিবেশনা। উৎসবমুখর পরিবেশে হাজার হাজার মুজিব আদর্শের সৈনিক ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জন্মদিনের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জন্মদিনে বাঙালির ফুলে ও ভালোবাসায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু সিক্ত হন।