এই ঋতুতে ভাইরাস ধরনের অসুখ যেমন- হাম, পানিবসন্ত ও ভাইরাল ফিভার হতে দেখা যায়। জ্বরে বাড়ির এক ব্যক্তি আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে আরেকজনও আক্রান্ত হয়। এভাবে এক ঘর থেকে অন্য ঘর- এই চক্র চলতে থাকে। এ ঋতুতে শীতের আবহাওয়ায় ঘুমন্ত ভাইরাস গরম পড়ার সাথে সাথে বাতাসের মাধ্যমে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানা দরকার।
জলবসন্ত খুব ছোঁয়াচে, বিশেষ করে যার কোনো দিন এ রোগ হয়নি তার জন্য পানিবসন্ত ছোঁয়াচে। সে জন্য এ রোগ হলে যার জীবনে হয়নি, তাকে রোগীর কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। সরাসরি সংস্পর্শে এবং রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে জলবসন্ত ছড়ায়। তাই জলবসন্ত হলে যা যা করতে হবে সেগুলো হলো-
১. আক্রান্ত রোগীকে আলাদা রাখতে হবে।
২. রোগীর কফ, নাকের পানি, শুকনো ফুসকুড়ি মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে। আর রোগীর ব্যবহার করা সব কাপড়চোপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
Read More News
৩. পুষ্টিকর ভালোমানের খাবার রোগীকে খেতে দিতে হবে। অনেকের মাঝে এ রোগের ব্যাপারে কিছু কুসংস্কার রয়েছে, জলবসন্তের রোগীকে মাছ, গোশত, ডিম ও দুধ খেতে দেয়া যাবে না। এগুলো খেলে নাকি ঘাগুলো পেকে যাবে। আবার কোনো কোনো রোগীকে বেশি করে ঠাণ্ডা খাবার খেতে দেয়া হয়। এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা।
৪. চুলকানি হলে হিস্টাসিন-জাতীয় ওষুধ খেতে দিতে হবে। যদি ঘাগুলো পেকে যায় বা নিউমোনিয়া দেখা দেয়, তবে এক কোর্স কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দিতে হবে। লোকাল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ফ্লোরোহেক্সিডিন লাগাতে হবে।
এবার আসা যাক হামের ব্যাপারে। হাম একটি অতি মারাত্মক অথচ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি। প্রত্যেক শিশুকে ৯ মাস বয়সে হামের টিকা দিতে হবে। হাম হলে কিছুতেই রোগীকে ঠাণ্ডা লাগাতে দেয়া যাবে না। কারণ, ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া কিংবা ব্রংকোনিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। হাম হলে শিশুকে প্রোটিন খাওয়া কমানো যাবে না, বরং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে দিতে হবে।
এখন ভাইরাল ফিভার নিয়ে আলাপ করা যাক। এই ঋতুতে কিছু কিছু টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বরও দেখা দিতে পারে। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত সর্দি-কাশির সাথে মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা দেখা দেয়। প্রথম দিকে জ্বরের শুরুতে এ জ্বর এবং টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে পার্থক্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে। জ্বরের ধরন ও ব্লাড টেস্টের পর রোগীকে ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাল ফিভার দেখা দেয় বলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। ভালো ও সুষম পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর থাকলে এসপিরিন কিংবা প্যারাসিটামল ধরনের ওষুধ খেতে দিতে হবে এবং রোগীর মাথায় পানি ও কোল্ড স্পঞ্জিং দিতে হবে। রোগীকে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে। এ অবস্থায় এক থেকে চার দিনের মধ্যেই জ্বরের প্রকোপ কমতে থাকে, যা পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই কমে গিয়ে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। এই নিয়মে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে- নিজে নিজে, অর্থাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
এই ঋতুতে প্রকৃতিতে অ্যালার্জেনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। গাছগাছালি থেকে ফুলের পরাগরেণুতে বাতাস ভরে ওঠে। সে জন্য এই সময় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, হে ফিভার এবং হাঁপানি রোগের আধিক্য দেখা যায়। গ্রামবাংলায় এই ঋতুতে অ্যালার্জিক এলভিওলাইটিস দেখা দেয়। এটা হাঁপানির মতো একধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। যদিও এ রোগে সাঁই সাঁই শব্দ শুনতে পাওয়া যায় না। একজাতীয় ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয় এবং খড়কুটো, গরুর ভুসি ব্যবহারের সময় অ্যালার্জেন (এসপারগিলাস ফিউমিগেটাস) নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে ঢুকে এ ব্যাধির জন্ম দেয়। এ থেকে বাঁচতে হলে এগুলো ব্যবহার করার সময় নাকে-মুখে মাস্ক কিংবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অনেকেই রোগে আক্রান্ত হই। তবে এটা দেখা যায় যাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ শক্তির অভাব আছে। সে জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ঋতু পরিবর্তনের সময় সতর্ক থাকা।
লেখক : অধ্যাপক, এম এইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজ। মোবা : ০১৯১৪৬১৫৭৫১